সংস্কৃতি মনা বাঙ্গালীর কাছে
বোশেখ-জ্যোষ্ঠির মতো মাস হয় না। “ইভেন্ট” এ ঠাসা
এই দুটো মাসে গরম কে ভুলে থাকার ও ভুলিয়ে রাখার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো “কালচার” এর মধ্যে ডুবে যাওয়া, এমন
গভীরে, যে লোডশেডিং হলেও “ধুর শালা”
বলার বদলে “আলো আমার আলো” গাইতে ইচ্ছে হবে।
সুযোগ ও মন্দ নেই – মাসের প্রথম দিনটাই বছরের প্রথম দিন, তাই শুভস্য
শীঘ্রম, শীঘ্রতর, শীঘ্রতম।
নববর্ষের শুভেচ্ছা (প্রথম পার্বণ)
আগে বছরের প্রথম দিনে নতুন জামা
পরে বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার যে রীতি ছিলো তা এই মনস্কামনায় যে বছরের
বাকি দিন গুলোও যেন ভাল মন্দ মিশিয়েও ভালোর দিকেই যায় বেশী। বছরের প্রথম দিন টা
এখনো আছে, ট্রেনের শেষ কামরার মতো, প্রণাম
আর আশীর্বাদ ও আছে, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কে খুঁজে নিতে হয়
এখন।
এই যে অপদার্থ ইংরেজ গুলো, ব্যাটারা যাওয়ার সময় ওদের ভাষাটার টুক্রো টাক্রা কুড়িয়ে নিয়ে যেতে ভুলে গেলো, তাতেই তো হল যত্তো মুশকিল! যতদিন ওরা ছিল, “ইয়েস,
নো, ভেরি গুড” এর বাইরে
আমরা জানতাম, কারুর সঙ্গে দেখা হলে ইংরেজি তে বলতে হয় “হ্যাল্লো, হাউ ডু ইউ ডু?” আর
কেউ “থ্যাঙ্ক ইউ” বললে নিয়ম হচ্ছে বলা “মেনশান নট”। নীরদচন্দ্র বলে এক বাঙ্গালী বিলেতে থেকে
ইংরেজি ভাষার ষষ্ঠী পুজো করছিলেন বটে সেই সময়েও, কিন্তু সে
সময় ওনাকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি বিশেষ। এমতাবস্থায় কি করা?
নেতাজী হারিয়ে যাওয়ায় কংগ্রেসের
প্রতি রাগ টা কেমন কমে আসছিলো, শ্যামা বাবুও চলে গেলেন, পূর্বপাকিস্তানের মানুষের সাথে ভাইচারা দেখিয়ে কিঞ্চিৎ ক্ষিদেয় কাতর হলাম
কিছুদিন, শেষে কিছু না পেয়ে আমরা আমাদের প্রগতীশীল শাড়ি কে
ভুলে ওই বুক-পেট এক করা মাও স্যুট এর প্রতি প্রনয় জানালাম - আর সেই মাও ৎসে তুং এর
কাছ থেকে জানলাম যে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা বলে একটা দেশ আছে, যদিও ওরা বেশির ভাগই সাহেব এবং সাদা চামড়া, তাদের
হাত নিঃসন্দেহে কালো, লোমশ, নিকষ কালো,
এবং তারা সেই হাত বাড়িয়ে দিলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়াই নিয়ম।
হামান দিস্তায় কেমন জোর ছিলো, হাত গুঁড়োনো গেছে কিনা – এসব বলা মুশকিল, কিন্তু এর মাঝেই আমরা ইংরেজি অভিধানকে অনেক দানে সমৃদ্ধ করে ফেলেছি –
যেমন ঘেরাও, লাঠিচার্জ, বন্ধ,
ধর্না ইত্যাদি – ইংরেজি অভিধানের এই নতুন
শব্দগুলো আমাদেরই দান। আমেরিকার কালো হাত ধরে আমরা শিখেও নিয়েছি যে “হ্যালোর” বদলে “হাই” বললে অনেক সুন্দর শোনায়, কেউ “থ্যাঙ্ক
ইউ” বললে উত্তরে তাকে “ওয়েলকাম”
জানানো টাই রীতি। সুন্দরের আহ্বানে লম্বা করে শুভ নববর্ষ বলাও ভুলে
গিয়ে ছোট্ট করে হ্যাপি পয়লা বৈশাখ বলা শুরু করে দিয়েছি কখন যেন। বেশ মডার্ন
শোনাচ্ছে না ব্যাপারটা?
বলার মাধ্যমও পাল্টে গেছে। আগে
শুভেচ্ছা, প্রণাম আর ভালোবাসা বিনিময় হতো হয় মুখোমুখি, কিম্বা পত্রালাপে। ধরুন আপনার মামা থাকেন দিল্লিতে, তাঁকে
নববর্ষের প্রণাম জানিয়ে চিঠি লিখতেন, সে চিঠি তিনি হাতে
পেতেন রবীন্দ্র জয়ন্তী নাগাদ, কিন্ত তাতে কোনো ক্ষতি যে হতো,
তা নয় – তিনিও চিঠি পাবেন এই ভরসায় আগাম
আশীর্বাদ জানিয়ে চিঠি লিখে দিতেন। বরং তাতে নববর্ষ নববর্ষ ভাব টা আরো বেশ কিছুদিন
থাকতো।
ফোন আসায় আরো একটু ভালো হল – একটু অন্যরকম ভালো– একদম হাতে গরম দিনের দিন প্রণাম
ও জানানো হয়ে গেলো, আবার সঙ্গে সঙ্গে আশীর্বাদ টাও হাতিয়ে
নেওয়া গেলো – চিঠির জন্যে হা-পিত্যেস করে বসে থাকার ব্যাপার
নেই। বরং চিঠিতে অনেক কথা লিখতে গেলে অনেক সময় লাগে, পোস্টাপিসে
যেতে হয়, লাইন দিয়ে পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড
লেটার, খাম, ডাকটিকিট – এসব কিনতে হয়। তার বদলে কি সুন্দর সব কথা বলা হয়ে গেলো, পয়সা একটু বেশী গেলো, কিন্তু তা যাক, কাজ টা তো আরো ভালো, আরো সুষ্ঠ করে হয়ে যায়, না কি? একদম ম্যাগীর টু মিনিট ন্যুডল্সের মতো।
শ্যাম পিত্রোদার কল্যাণে সেলফোন
আসার পরে দেখা গেলো টেক্সট মেসেজে কাজ একই হয়, কিন্তু খরচা আরো কম।
অতএব, বাঙ্গালীর এক কথা – কথা কম,
টাইপ বেশী। ভোর থেকে শ্যামের বাঁশী চালু – প্রতি
দু মিনিটে একবার করে ট্যাঁক ট্যাঁক করে উঠবে যন্ত্র – কিন্তু
বাংলায় টাইপ টা তখনো করা যেতো না সেলফোনে – তাই সেই সবেধন
নীলমণি ইংরেজিই ভরসা। যাকে পাঠিয়েছেন, তিনি প্রাতঃকৃত্য সেরে
এসে নাকে চশমা তুলে দেখলেন মোট বত্রিশ খানা মেসেজ, বত্রিশ জন
বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে – যাদের মধ্যে অন্ততঃ তিন জন আছে,
যারা আছে বলেই ওনার মনে ছিল না। সবারই মোটামুটি এক কথা - উইশ উই এ
ভেরি হ্যাপি পাইলা বাইসাখ – স্বামী, স্ত্রী,
পুত্র, কন্যা। এক টাকার মেসেজে পয়লা বৈশাখ এর
দায়িত্ব উদ্ধার, একদম পুরো পরিবারের সবার জন্য, অর্থাৎ পার হেড চার আনা। যাকে পাঠালেন, সে পড়লে পড়লো,
না পড়লে আপনার দায় নেই। আর আতাক্যালানে ভদ্রলোক “হ্যাপি পাইলা বাই সাখ” পড়ে যদি ভাবেন আপনি বাঙাল
ভাষায় জানতে চেয়েছেন শাক কিনে খুশি হয়েছে কিনা, তার ভার ও
আপনার নয় – বাড়িতে নিশ্চয়ই টেক স্যাভি ছেলে মেয়ে আছে,
সে বুঝিয়ে দেবে। মোট কথা, এই একবিংশ শতাব্দী
তেও এক টাকায় বড় কাজ টা হয়ে গেলো কিনা? উত্তর উনি দিতেই
পারেন, দিলে ওনার পয়সা যাবে, তাই সে
মাথাব্যাথার থেকেও আপনার রেহাই।
অনেকে মেসেজেই কবিতা লিখতে শুরু
করেছিলেন এর মধ্যে, কিন্তু খর্চায় পোষাচ্ছিল না ঠিক। এক টাকা বাঁচানোর ও
রাস্তা পাওয়া গেলো তখন – তার নাম হোয়াটস অ্যাপ আর ফেসবুক
মেসেঞ্জার – সেই মার্কিনী কালো হাত ধরেই এলো। একটাই মেসেজ,
বাংলায় ও টাইপ করতে পারবেন কারন অ্যান্ড্রয়েডের কল্যাণে এখন বাংলায়
টাইপ করা যায় - এক সঙ্গে দুশোবাহান্ন জন কে পাঠালেও সেই একই ডেটা চার্জ। দশ পয়সায়
হয়ে যাবে।
এবারে আপনার যদি এই দুশোবাহান্ন
জনের নাম টাইপ করতে ভালো না লাগে, তাহলে আরো সহজ উপায় আছে। ফেসবুকে
শুধু একটা স্ট্যাটাস টাইপ করে দিন। অবাঙ্গালি বন্ধুদের ও জানাতে চান আজকে আপনার
নববর্ষ? তাহলে বাংলায় লিখে ইংরেজি হরফে টাইপ করে দিন –
“সুভো নাবা বারশা – উইশ ইউ অ্যা ভেরি হ্যাপি
বেঙ্গালি নিউ ইয়ার”। অনেক ওয়েবসাইটে ফ্রি তে ছবি পাওয়া যায়,
তার একটা পছন্দ করে ঝেড়ে দিন, লেখার সঙ্গে
পোস্ট করে দিন। এতে ফোন ও লাগে না – অফিসের ইন্টারনেট
ব্যবহার করে একদম ফোকটে পাঠিয়ে দিন। হয়ে গেলো নববর্ষের ভালোবাসার দান-প্রতিদান।
একশো বছরে নববর্ষের এই টুকু বিবর্তন কি কাম্য নয়?
প্রত্যেক জাতিনিষ্ঠ বাঙ্গালী তাই
এখন সকালে উঠেই, কিম্বা কেউ কেউ আগের দিন অফিস থেকে কিম্বা রাতে
বাথরুম যাওয়ার সময়, একটা কাজ অতি অবশ্যই করে – সেটা হলো ফেসবুকে একটা পোস্ট করা – শুভা নাবা বারসা।
তারপর সারাদিন কি করে? সে গল্প এর পর।
ভোজনম্ শরণম্
ছাগলদের কোনো জ্যোতিষী নেই।
থাকলেও তার আয় তেমন হতো না, কারন ছাগলের ভবিষ্যৎ গণনা করা খুব সহজ, যে কেউ করতে পারে। প্রথম দুই সন্তানের জন্যে দুগ্ধ প্রাপ্তি তে অগ্রাধিকার,
তৃতীয় থেকে খুঁজে খেতে হবে, শক্তিশালী দুই
ভাই-বোনের খাওয়া শেষ হলে সেই ফাঁকে – কারন দুগ্ধপথ মাত্র
দুটো। ঘাস পাতা খাওয়া শুরু করলে বঞ্চনার থেকে মুক্তি। অতঃপর গৃহস্তের ডান্ডায়
প্রহার, কচি লাউডাঁটা খেয়ে ফেলার অপরাধে। নারী হলে প্রতি বছর
মাতৃত্ব প্রাপ্তি। পুরুষ হলে বেশীরভাগের খুব অল্পবয়সে পুরুষত্ব নাস্তি, প্রতি দশে নয়জনের তাই, এবং ভরন্ত যৌবনে পঞ্চত্ব প্রাপ্তি।
দশের মধ্যে চার জনের রবিবারে, বাকি চার উৎসবে, এবং বাকি দুই অন্য দিনে, তবে সবাই মুলতঃ উষাকালে।
বেঁচে থাকার সবথেকে বড় জ্বালাতন
হল সব সময়ে “মরে যাব, মরে যাব” বলে ভয় পেতে হয়। ছেলেদের চোট পেতে হয়, একটু বড় হয়ে
হাফ সোল খেতে হয়, বিয়ে করে গুটিকতক সাবসিডাইসড বাচ্চা পয়দা
করে বড় করতে হয়, চাকরী করতে হয়, ইয়েস
স্যার করতে হয়, রিটায়ার করতে হয়, বুড়ো
বয়সে প্যান্টে হিসু করে ফেলতে হয়, প্রস্টেটের সাইজ নিয়ে
চিন্তা করতে হয়, আর আসে পাশে কেউ পটল তুললেই সেই ভয় –
মরে যাবো নাকি? পাঁঠা দের এর কোনোটাই করতে হয়
না – জন্মাও, চাচার হাতে খাসি হয়ে দিন
দুয়েক চেঁচাও, তারপর চাচার বৌয়ের দেওয়া দানা খেয়ে পুরুষ্ট হও,
আর কদিন পরে ম্যাহ্যা করে একটা ডাক দিয়ে ভোরবেলায় ফুটুস হয়ে যাও।
দেশে যখন দুর্ভিক্ষ হয়, মানুষ তখন সরকারি অনুদানে সমৃদ্ধ
রেশন এর চাল, ডাল তেল কেনে, রৌদ্রের
মধ্যেও, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। নববর্ষের দিন ভোর বেলায় বেরোলে
অনেকের ভুল ধারনা হতে পারে যে দুর্ভিক্ষ ফের এসেছে – কারন
বাজারে লম্বা লম্বা লাইন। তার মধ্যে সবথেকে বড় লাইন টা অতি অবশ্যই মাংসের দোকানের।
এই এক যায়গায় কিন্তু উর্দুর চল খুব – রাং, সিনা, গর্দান, চাঁপ, কলিজা, দিল... এবং সেখানেও বাছাবাছি – “চাচা, বাচ্চা খাবে, খাসি দেবে
না, খুব চর্বি হয়, পাঁঠা দাও, হাড় একদম হয় না যেন, না না, চর্বি
দেবে না, হার্টের জন্য খুব খারাপ, এই
জন্যেই তো রেড মিট ছেড়েই দিয়েছি প্রায় – আজকে নেহাৎ বচ্ছরকার
দিন, তাই এলাম, না হলে এই গরমে কেউ বড়
মাংস খায় নাকি?” যিনি বলছেন, তাঁর বয়স
বছর পঁয়তাল্লিশ – প্রতি রোববার ওই লাইনে ওনাকে দেখা যায়,
তা সে যতই গরম হোক, আর তাঁর নিজের বাচ্চা হাড়
চিবিয়ে পাউডার করে দিতে পারে তিন মিনিটে, কিন্তু নিজে খাবেন
না অথবা স্ত্রী বকবে বলে অকারনে কিছু মিছে কথা বলে ফেললেন। আরো খানিক বাকবিতন্ডা
চল্লো সাদা চর্বি টা আসলে চর্বি না রেওয়াজি। মেটে বেশী হলেও খারাপ, কম হলেও খারাপ। অন্য পাঁঠার মাংস ঢুকে গেলে ভেজাল। বাছা বাছিতে বিরক্ত হয়ে
চাচা গোল মতো এক খানা নিটোল মাংস দিতে যাচ্ছিলেন – ভদ্রলোক
হাঁ হাঁ করে উঠলেন – ওকি, ওকি, ওসব কি দিচ্ছো? ওসব আমরা খাই না, ওটা বাদ দাও, বাদ দাও। চাচা জানতে চাইলেন – আপনি না খাবেন তো কৌন খাবে? ইয়ে তো সবসে নরম গোস্ত
আছে?” সঙ্গে সঙ্গে একটু রসিকতাও হয়ে গেলো – “আমাদের লাগে না, তোমাদের তো অনেক বাচ্চা হতে হয়,
তোমার লাগবে, বাড়ী নিয়ে যাও” – এই বলে খানিক হ্যা হ্যা করে হাসি। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটি তার বাবার
আঙ্গুল নেড়ে জিজ্ঞ্যেস করলো – বাবা, ওটা
কি দিচ্ছিল চাচাদাদু? বাবা মুচকি হাসি মুছে নিয়ে তৎক্ষনাৎ
খেঁকিয়ে উঠলেন “এই জন্যেই তোকে বাজারে আনতে চাই না। সব কিছু
নিয়ে কথা! চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো একদম! ওই দেখো, বেড়াল,
দেখো, কেমন খেলছে!” এক
ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস নিয়ে মাঝবয়সী ভদ্রলোক পাঁঠার মাংস নিয়ে বাড়ী ফিরলেন –
স্ত্রী বললেন “এটা কি দিয়েছে গো? খারাপ কিছু নয় তো?” ভদ্রলোক আড় চোখে দেখে নিয়ে বললেন
“মেটে!” স্ত্রী রেগে গেলেন “আমি মেটে চিনি না?” ভদ্রলোক শান্তনা দিলেন –
“না, না, ওসব বাদ দিয়ে
দিয়েছি, ঝগড়াও করেছি দিয়ে দিচ্ছিল বলে, এটা দিল, কিম্বা গুর্দা হবে, ভালো
জিনিস – দেখো না নাকি কাগজে, কিডনি
কত্তো টাকায় বিক্কিরি হয়”। স্ত্রী ও খুশী হয়ে চলে গেলেন যে
খারাপ জিনিস দেয়নি – যেন “খারাপ জিনিস”
খেলে বেস্টিয়ালিটির দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যেত।
শুধু যে মাংস এসেছে, তা নয়। চিংড়িও এসেছে। আগে হলে ইলিশ আসতো। কিন্তু একে ফারাক্কা বানিয়ে
গঙ্গার জল দিই না, তার পরে আবার আউট হওয়া রোহিত শর্মা চোট্টা
আম্পায়ার এর কল্যাণে সেঞ্চুরী বানিয়ে বাংলাদেশের হাতের গোড়া থেকে বিশ্বকাপ টা হড়কে
দিয়েছে, তাই রেডিও মুন্নার প্রচারে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ আর
আমাদের ইলিশ দেয় না। এদিকে ইলিশ তেমন ওঠে না, চোরা পথে ওপার
থেকেই কিছু আসে, সেই ইলিশ কিনতে গেলে অনেককেই কিডনি বিক্রি
করতে হতে পারে, তাই ইলিশ বাড়ী আসে না আর। চিতল আসতো, কিন্ত উঠছে না দিন কয়েক। তাই চিংড়িই ভরসা। মন্দ কি? প্রথমে
বাদাম দেওয়া কুড়কুড়ে আলুভাজার সঙ্গে একটু চাপ চাপ মুগের ডাল দিয়ে সাদা, ভাত, তার পরে সুক্তো। পাকা রুই দিয়ে দই রুই ও আছে।
এরপর প্রচুর পরিমানে কাজু কিসমিস দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের পোলাও, সঙ্গে চিংড়ি আর কচি পাঁঠার কষা মাংস, শেষ পাতে
রামকৃষ্ণ স্যুইটসের দই আর রাজভোগ। এই না হলে পয়লা বৈশাখ? কে না
জানে, কবিগুরু যে লিখে গেছেন – এসো হে
বৈশাখ এসো এসো – সে তো এই খাবারের জন্যেই!
রাতের খাবার অবশ্য হোটেল থেকে
আসে,
কারন স্ত্রী রাতে রান্না করতে নারাজ। অনেকে ছাই পাঁশ খান সন্ধ্যেয়,
তাতেও অনেক স্ন্যক্স আসে, তাই কারো কারো রাতের
খাওয়া বন্ধও থাকে অনেক সময়ে। সকালেও একটু বেশী হয়ে গেছে, তারপরে
এই সব স্ন্যাক্সেও অনেক ক্যালোরি কিনা, তাই। রাতে শোয়ার আগে
হাফ মাতাল বাঙ্গালী ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে ঘেমো বগলের কথা ভুলে গান ধরে “বহুযুগের ওপাড় হতে আষার এলো আমাড় মনে”। সারাদিন যে
সংস্কৃতির ছোঁয়া তাকে ছুঁয়ে গেছে, তার শেষ রেশ হিসেবে।
সংস্ কৃতির কথা পরের বার।