ছবিওয়ালা? তারা কারা? সে বলার আগে পাঁচ
জনের কথা বলতেই হবে।
অতীশ সেন ছবি তুলছেন বহুদিন, যদি শুধু ছবিই তুলতেন, তাহলে
হয়তো অন্য কিছু আর করার দরকার হতো না। কাজ করেন একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে, সে জগতে
তাঁর শিল্পী স্বত্বার ঠাঁই নেই তেমন, তাই কাজের বাইরে তিনি শুধুই শিল্পী। ঠোঁটের
কোনে সদাই হাসি লেগে আছে, অতীশ সবাইকে ধরে রাখেন তাঁর ওই হাসি দিয়ে। আর তারই মাঝে,
ছবি তোলেন মানুষের, জঙ্গলের, সমুদ্রের, আকাশের। আর যখন ছবি তোলেন না, তখন গান
শোনেন, পেইন্টিং দেখেন, আর নানা নামী অনামী মানুষের সাথে আড্ডা দেন।
নাবিক মানুষ
অরিজিৎ তালুকদার কাজের সুত্রে ঘুরে বেড়ান দেশে দেশে, মিশে যান নানান সংস্কৃতি আর
আবহাওয়ায়। কাছের মানুষরা ওঁকে রাতূল নামে চেনে। পাহাড় আর জঙ্গলে ঘুরতে ভালোবাসেন,
তাই ডাঙ্গায় থাকলে একবার অন্ততঃ ওনাকে দেখাই যাবে হয় পাহাড়ে নয় জঙ্গলে। ছবি তোলার
ব্যাপারে ভীষন কুঁড়ে, তাই ছবি তোলেন খুব কম, আর দেখান আরো কম। কিন্তু যখন দেখান,
সে এক খানা সত্যিই দেখবার মতো ব্যাপার হয়।
বিজিৎ বসুর ছবি তোলা শুরু সেই ক্লাস
টেনে পড়ার সময় থেকে – হাত খরচের টাকা
জমিয়ে এক খানা রাশিয়ান ক্যামেরা দিয়ে শুরু করেছিলেন। অনেক কিছুই করেন টুক টাক, ছবি
আঁকেন, বাথরুমের বাইরেও গান গেয়ে থাকেন, বাংলা লেখেন, এমন কি ইন্টিরিয়ার ডিজাইনিং
এও মাঝে মাঝে সময় দেন, কিন্তু কোনোটাই তেমন মন দিয়ে নয়, শুধু ফোটোগ্রাফিটাই
ব্যতিক্রম – এখানে তাঁর বোধহয় নাড়া বাঁধা আছে। চাকরি
সূত্রে তথ্য প্রযুক্তির জগতে আছেন তাই অন্যদের মতোই সদাই ব্যাস্ত। কিন্তু তাই বলে
ছবি তোলায় ভাঁটা পড়েনি, তাই মন খোলা থাকে সদাই, আলো দিয়ে আঁকার ভাবনায়।
বাবার
ক্যামেরা দিয়ে প্রথম ছবি তোলা দেবর্ষি দত্তগুপ্তর, তখনো হাফ প্যান্ট ছাড়া হয়নি। তারপর
থেকে শুধু ছবি আর ছবি। আর এরই মাঝে ওকালতি নিয়ে পড়াশোনা, গাড়ী নিয়ে পাগলামো, আর
সবার ওপরে তাঁর কর্মক্ষেত্র – তাঁর কারখানা,
অফিস – দেবর্ষি কলকাতার ফার্মা জগতে অতি পরিচিত
এক নাম। ঋষি নাইকন এর বিশ্ব আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন, তাও
প্রায় তিন বছর হতে চল্লো। যখন সময় পান, গাড়ী নিয়ে বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে পড়েন
মেঘেদের তাড়া করতে। কর্মসুত্রে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে হয়, তাই আকাশ থেকে মেঘ
দেখা, সেও তাঁর নিজস্ব।
সৌম্য বন্দোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র তথ্য প্রযুক্তি, কিন্তু
তাঁর বাইরে তাঁকে ঘিরে থাকে শুধুই ফোটোগ্রাফি। মানুষের সাথে মিশতে ভালবাসেন, তাই
তাঁর ছবি তোলার পেছনে সবসময়ে থাকে অনেক গল্প। উনি আগে মানুষকে চেনেন, আর সেই থেকেই
বেরিয়ে আসে সেই বিশেষ মুহূর্তের ছবি।
একে অপরকে চিনতেন অনেকদিন ধরেই, কিন্তু
অন্যরকম কিছু করার অভীপ্সা এই পাঁচজনকে একসাথে নিয়ে এসেছে ২০০৫ সালে, ছবিওয়ালা
তৈরি হয়েছে। ছবিওয়ালার প্রথম প্রদর্শনী ২০১২ সালে। মোমেন্ট-আম নামের সেই প্রদর্শনী
হইচই ফেলে দিয়েছিল তৎক্ষণাৎ। দর্শকরা সুচিন্তিত মতামত দিয়েছিলেন, সেই মতামত মাথায়
রেখে ছবিওয়ালার দ্বিতীয় প্রদর্শনী ২০১৩ তে। নাম তার পাঞ্চ-ও-ট্যান্ট্রাম। পাঁচ
জনের পাঁচ খেয়ালীপনার টুকরো একসাথে বেঁধে ছবিওয়ালারা গল্প বেঁধেছিলেন এক তারে।
কুমারটুলির মৌন মূর্তির মুখর চেহারা থেকে কাশীর পঞ্চত্বপ্রাপ্তির হাসি কান্না – পাঞ্চ-ও-ট্যান্ট্রাম ছিল এক কথায় সুপার হিট। বর্ষার শহরের
নানা বাধা উপেক্ষা করে কলকাতার মানুষ এসেছিলেন ঢলের মত, ছবিওয়ালা কে উৎসাহ
যুগিয়েছেন। এবারে ছবি ওয়ালার হ্যাটট্রিকের পালা –
২০১৪ তে আসছে এলি-মেন্টাল। গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়, ডিসেম্বরের ৭, ৮ আর ৯ তারিখ।
দেখা যাবে সৃজনশীল মনন কেমন দেখে তার আশেপাশের জগৎ কে, তার কিছু নমুনা – কিছু শ্বাস রোধ করা সময়ের ছবি, কিছু খুঁজে পাওয়া রংবাহার,
কিছু অনুপম মুহূর্ত। সময় বয়ে যাবে। হতেই থাকবে নানা কিছু। ছবিওয়ালা ধরে রেখেছে তা,
স্মৃতিমন্থনের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে। সেই সব মুহূর্ত!
No comments:
Post a Comment