ভয়
দুর্গাপুর আমার ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া প্রেম।
কলকাতা আমার জীবনসঙ্গিনী। নোহারী আমার প্ল্যাটনিক লাভ। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আমার দুঃখ, আনন্দ, ভয় – এ সবের মাঝেই
তাই ছড়িয়ে আছে নোহারীর কথা।
বাইরে দুর্গাদালান আর আটচালা, তার একদিকে
বুবিদের বাড়ী, তার বাবার নাম বদ্যিনাথ, তার পাশে এন এন বোস লেখা একজনের বাড়ী, যেখানে তাপসদা, কালু আর
চেঁড়ু থাকে। পেছনে কাতুজেঠুর ডিস্পেন্সারি। ওপাশে বাপি আয়কতদের বাড়ী। দালানের মুখমুখি
দাঁড়ালে ডান পাশ দিয়ে সদর দরজা। আদ্যিকালের সেই দরজা অনেকটা একটা চেম্বারের মতো – তার ভেতরে
সমকোনে দুটো দিক খোলা, দুপাশে উঁচু পাঁচিল, মাথার উপরে ছাদ দেওয়া দ্বার। সেই সিলিং এর
কড়ি বরগার মাঝে এখনও পড়া যায় ১৯২৩ এর কংগ্রেস অধিবেশনে নেতাজীর বক্তব্যওয়ালা স্টেটসম্যান
এর পাতা – শেষ তখন প্ল্যাস্টার করা হয়েছিল, তাই রয়ে
গেছে। গরুর গাড়ী গিয়ে দাঁড়াবে সেই সদরের পাশে, স্যুটকেস – ট্রাঙ্ক এর দায়িত্ত্ব রতনদার হাতে ছেড়ে দিয়ে
আমরা প্রথমে মা দুর্গার মুখ দেখবো,
প্রণাম করবো,
তারপরে ঢুকে পড়বো সদর দরজা দিয়ে। ভেতরে ঢুকলেই দামোদর দুয়ার।
সেখানে খাজুরাহোর পঞ্চরত্ন আর্কিটেকচারের অনুপ্রেরণায় বিষ্ণুপুর এর শ্যামরায় মন্দির
এর আদলে তৈরী আমাদের কুলদেবতা দামোদর এর মন্দির। সেটা পেরলেই একটা দরজা দিয়ে ঢুকে কালী
পিসিদের বাড়ী। তারপর আবার একটা কালো দরজা পেরিয়ে চার পা গেলেই উঠোন, মাঝে মরাই, কালো আলকাতরা
দিয়ে লেপা, গোল। তার ডান দিকে বসে আছে আমার প্রথম ভয় – বড়জেঠুমনি।
ছয় ফুট লম্বা, তামাটে গায়ের
রঙ, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, বড় বড় চোখ, একটু লালচে, আর, সবার উপরে, বাজখাঁই
গলা। শ্রী রামমোহন বসু, পিতা শ্রী উপেন্দ্রনাথ বসু, পোঃ অঃ ও গ্রাঃ নোহারী, থানা গোয়ালতোড়, জেলা মেদিনীপুর।
গ্রামের এক্স স্টার ফুটবলার,
অল্পদিন টাটা কোম্পানিতে চাকরী করেছেন, তারপর জমি
জিরেত দেখাশোনা করতে মেজকাকাকে সাহায্য করার কারনে চাকরী ছেড়ে গ্রামেই বাস, উগ্র কংগ্রেসি, আগুনে রাগ।
ভয় পায়না, এরকম লোক বিশেষ দেখিনি আমাদের জেনারেশনে। আমাদের দেখে গম্ভির
গলায় “এসো এসো এসো” বলছে, আর আমি কুঁকড়ে করলা হয়ে আছি। গৌতমের কথা মনে
পড়া যাচ্ছে – গতবছর ও একটা ড্রামের উপরে উঠেছিল, বড়জেঠুমনি
একটা হাঁক দিল “এ্যাই শুয়ার,
বাঁদরামো হচ্ছে?” – এর পরের দৃশ্য, মঞ্জু কাকিমা
গৌতমের প্যান্ট ছাড়াতে ছাড়াতে বলছে “কি যে দরকার এসব দুষ্টুমি করার? পুজোর নতুন
প্যান্ট, এখন কাচতে হবে”। আমি এমনিতেই জানতাম
আমি ভালো ছেলে কারন মা আর মাসিমনি আমি কোনো বেয়াদপি করলেই এটা বলে আমাকে শান্ত করে
দিত, আর নোহারীতে তো আমি আরো ভালো হয়ে যেতাম। চকোলেট বোমা নিয়ে সমস্ত
লোভ আমি জ্বলাঞ্জলি দিয়ে দিতাম,
ঘরের ভেতরে কখনো ক্যাপ ফাটাতাম না, এমনকি আমার
পিসতুতো বোন সোমার সঙ্গেও ঝগড়া করতাম না, যদিও আমার সমবয়সি হয়েও সোমা আমাকে বেশ অকারনে
বকা ঝকা করত। এটা সেই সময়কার কথা যখন জন গন
মন শুনলে ছেলে বুড়ো নির্বিশেষে উঠে দাঁড়াতো, ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন এ কান্ট্রি এন্টার
করা ছাড়াও দেশ বলে একটা ব্যাপার ছিলো, আমরা সবাই তখনো গ্লোবাল সিটিজেন হয়ে “কি নোংরা
দেশ” বলে বিদেশে চলে যাওয়ার আপ্রান চেষ্টা করে বেড়াতাম না। তখনো আমরা
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করতাম, যদিও বাড়িতে
শুনতাম অনেকে বলছে বাঙালরা নাকি পচা মাছ আর কচু খায়, তাতে ওদের বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই, উল্টে আমরা
পোস্ত আর মুড়ি খাই বলে হাসাহাসি করে। তবে হ্যাঁ, মঞ্জু কাকিমাও বাঙাল বটে, কিন্তু ওরা
ভালো বাঙাল, গৌরকিশোর ঘোষের নিজের ভাইঝি, তাই ওদের বাঙাল বলে হ্যাটা করা যাবে না। প্লাস
যুদ্ধ হচ্ছে, আমরা ওদের জন্য লড়ছি, ওরাও আমাদের সাথে আছে, সাতেও, পাঁচেও।
সন্ধ্যে ৭:৩০এ দেবদুলাল খবর পড়বেন,
বড়জেঠুমনির ফিলিপ্স বাহাদুর ট্র্যাঞ্জিস্টার রেডিও বেরিয়ে এলো
পালঙ্কের ঘর থেকে, রাখা হল একটা তক্তপোষের উপরে, উঠোনের মাঝখানে। হ্যাজাক জ্বলছে, সামনে কুড়ি-বাইশজন
লোক, সবাই নিশ্চুপ – ঈন্দিরা গান্ধী নতুন কি বলেছেন পাকিস্তান
নিয়ে, সেটা দেবদুলালের কাছে শুনে, বুঝে, কাজে লাগাতে হবে। বড়জেঠুমনি পঞ্চায়েত প্রধানও
বটে, তাই গ্রামের মানুষও ওখানে হাজির, কঅয়েকজন
নিজের ইচ্ছেয়, কয়েকজন অর্ডারে। আমি এর মাঝে একদিন কিছু না বুঝে হঠাৎ করে গেয়ে
উঠেছিলাম “ম্যায় শায়দ তুম নেহি, মগর হ্যায় হাসি”, ভালো সুর, শুধু শায়দ
কেন বলছে, আমি আর তুমি তো এক হয় না এটা সহজ ও জানা কথা, তাই একটা
প্রশ্ন চিহ্ন, ও একটা হাসি। বড়জেঠুমনি একশোদশ ডেসিবেলে একটা হাঁক দিল “আঃ” বলে, আমি চমকে উঠলাম, আর দেখলাম ভীষন কান্না পাচ্ছে কিন্তু পারছি
না, বুকের মাঝখানটা কেমন ধড়পড় করছে আর কি একটা আটকে আছে, চারপাশের
লোকগুলো কেমন আবছা হয়ে যাচ্ছে,
আর মনে হচ্ছে আমি শেষ হয়ে গেলাম, আমার কোনো
শক্তি নেই আর। শ্বাস টানার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না, আটকে আটকে
যাচ্ছে। ঠাকুমার চিৎকারে সম্বিৎ ফিরলো – “ও মনু, এ তুই কি করলি রে, ছেলেটা যে
সটকা লেগে শেষ হয়ে গেলো”। বড়জেঠুমনি মাথা নাড়তে
নাড়তে আফসোস করছে “এ আমি কি করলাম, মা দুর্গা, ছেলেটাকে ঠিক করে দাও, আর কোনো
দিন বকব নি”। মা দুর্গা কি ভাবলেন কে জানে, আমি কিন্তু
একটু পরে ঠিক হয়ে গেলাম। তারপরে অনেক বাঁদরামো করেছি, কিন্তু আর
কোনদিন বড়জেঠুমনির কাছে বকা খাইনি। ভয়ও পাইনি তেমন আর।
অসুর আর সিংহর ভয় তো ছিলই। কিন্তু মা দুর্গার
ভরসাও ছিল। তাই প্রত্যেক বার গিয়ে লক্ষ করে দেখতাম সিংহের মুখটা আমার থেকে বেশি অসুরের
দিকে ঘোরানো, অসুরের রাগ টাও এবারে যেন একটু কম। তারপরেও যদি ভয় লাগে, তাহলে অ্যামিউনিশন
তো আছেই। আমার বন্দুক, আমার রীল ক্যাপ, লুজ ক্যাপ, খুব চাপে পড়লে গত কালীপুজোর ব্যবহার না করা
বাচ্চু বোমা। তখন আমাদের বন্দুক বলতে এয়ার গান, হাতলটা আসল বন্দুকের মতোই কাঠের এবং বার্নিশ
করা, লোহার নলের বাঁ দিকে বা ওপরে একটা ছিটকিনি ধরনের বস্তু থাকতো, সেটা টেনে
নিয়ে এসে পেছনের দিকের একটা খাঁজ এ আঁটকে দিতে হতো, তারপর ট্রিগার টিপলেই খটাস করে একটা আওয়াজ, আর নলের
মুখে লাগানো একটা টুপি ছুটে বেরিয়ে যেত, যেন বুলেট বেরচ্ছে। টুপিটা আবার একটা সুতো
দিয়ে বন্দুকের সঙ্গেই বাঁধা থাকতো,
যাতে হারিয়ে না যায়। বন্দুকের রেঞ্জ ২২ ইঞ্চি। সামনের লোক ভয়
পাক বা না পাক, আমি গুলি ছুড়বার সময়ে চোখ খুলে রাখতে পারতাম না কখনো। আরেকটা
অস্ত্র হল রিভলভার। কালো রঙের দুটো টিনের ডাইস প্রেস করা দেড় ইঞ্চি বাই ৩ ইঞ্চি কোয়াড্রিল্যাটার্যালের
টুকরো রিভেট করা একটা অপরটার সঙ্গে,
সামনে বেরিয়ে গ্যাছে চকচকে নিকেল করা লম্বা নল, নিচে একটা
ছোট নল, মানে ওটা দোনলা, নলের নিচে ট্রিগার, আর উপরের
দিকে ক্যাপ লাগানোর জায়গাটা খুলে বের করার স্প্রিং, চাপ দিলেই থাম্বস আপের মত ওপর
দিয়ে বেরিয়ে আসবে ক্যাপ লোড করার জায়গা। দু রকমের ক্যাপ লাগানো যায়, একটা দেখতে
সরু লম্বা স্ট্রিপের মতন, হাফ সেন্টিমিটার চওড়া, একদিকে লাল, অন্যদিক
সাদা, মাঝে একটু ফাঁক দিয়ে দিয়ে একটা করে ১ মিমি জায়গায় একটু বারুদ
ভরা, ট্রিগার টিপলেই স্প্রিং কাজ করবে, বারুদের
উপরে গিয়ে পড়বে হ্যামার, ফটাস্ করে ফাটবে সেই বারুদ। স্প্রিং অ্যাকশন এ উঠে আসবে পরের
ক্যাপটা ঠিক হ্যামারের তলায়। যাদের ধৈর্য নেই, তারা লুজ ক্যাপ ওপর থেকে একটা একটা করে লাগিয়ে
ফাটাতো। বন্দুক কাঁধে, হাতে রিভলভার, পকেটে ভর্তি ক্যাপ, আমি প্রস্তুত।
শুধু একটাই চিন্তা থাকতো, ষষ্ঠী।
সে এক ভয়ঙ্কর জিনিষ ছিল ষষ্ঠী খ্যাপা। সুপ্রিম
টেরর, মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবেল। এক মাথা কাঁচাপাকা চুল, লম্বা মন্দ
না, গায়ে কখনো খুব নোংরা ভেন্টিলেটার ওয়ালা গেঞ্জি, কখনো বা
উদোম, নিম্নাঙ্গে কখনো হাফ প্যান্ট, কখনো লুঙ্গি, কখনো গামছা।
মুখটা একটা মোলায়েম হাসিতে ভরে আছে,
দাঁত একটু বড়, ঠোঁটের কোনায় জমে আছে সেমি ট্র্যান্সপারেন্ট
ছ্যাপ্। এই সেদিন চন্দনদা মনে করিয়ে দিলো, ষষ্ঠির ফেভারিট গান ছিল “টম্পাকলি পাটায় পাটায় গানে”, অর্থাৎ কিনা “চম্পাকলি, পাতায় পাতায়”। রাম যাত্রার (অনেকে
কেষ্ট যাত্রাও বলে) বেহুলা ওরফে ক্ল্যারিওনেট বাদক ওরফে চাঁদ সওদাগরের সভাসদ তারাবাবু
দিনের বেলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ী খাচ্ছে, ষষ্ঠী গিয়ে তার ধুতির কাছা খুলে নিয়ে হাঁটা
দিল। তারাবাবু বুঝতে পেরে লাফ দিয়ে ঘুরতে গিয়ে নিজের ধুতিতেই পা জড়িয়ে পড়লো, আমরা দেখলাম
আন্ডারওয়্যার পরে ঘাসের উপরে শুয়ে আছে বেহুলা। ষষ্টী ধীর পায়ে ফেরত এসে কাছা ছেড়ে তারাবাবুর
হাত থেকে পড়ে যাওয়া বিড়িটা তুলে নিয়ে ফুঁকতে ফুঁকতে চলে গেলো। তারাবাবু তারপর পাগলদের
যৌনজীবন নিয়ে একটা ছোট্ট গালি,
আমি তখন ভাবতাম ওটাও এক ধরনের দাদা, দিয়ে আবার
ধুতি গোঁজায় মন দিলেন। অথবা আমি রিভলভারে ক্যাপ ভরছি খুব মন দিয়ে, ষষ্ঠী এক
গাল হেসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে নাকি সুরে বলল “হিঃ”, আমার তক্ষুনি
মনে হল এই অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছে না, ইচ্ছে হল ওকে গুলি করে শেষ করে দিই, রিভলভারটা
বাড়িয়ে ধরে ট্রিগার টিপলাম চোখ বুজে। ক্যাপ ফাটলো কিনে মনে পড়ে না, ষষ্ঠী ভাবলো
ওটা খাবার, আমার হাত থেকে নিয়ে একটু চুষলো, তারপর তেবড়ে
যাওয়ার পরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। আমি
আবার কাঁচুমাচু মুখ করে খুঁজতে থাকলাম কাকে ধরে অ্যামিউনিশন এর নেক্সট কন্সাইন্মেন্টটা
যোগাড় করা যায়। যাত্রা হচ্ছে,
মীর কাশিম মীর জাফরকে উত্তেজিত গলায় বলছে “আব্বাজান, আপনার জামাই
বলে লোকজনের কাছে মুখ দেখাতে আমার লজ্জা করে, শুধু আপনার মেয়ের সোনা মুখপানে চেয়ে আমি তাকে
নিকাহ করেছি, আপনার ঘর জামাইও হয়েছি,” আর মীর জাফর রাগে থরথর করে কাঁপছে, আপামর জনতা
হাতের বিড়ির টানটাও দিতে ভুলে গেছে,
কয়েকজন ছ্যাঁকাও খাচ্ছে, ষষ্ঠী তার সেই বিখ্যাত রয়্যাল ড্রেসে দুজনের
মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে “হিঁ হিঁ” করে হাসতে আরম্ভ করল। দুই মীর চুপ, প্রম্পটার
আরও এক পাতা পড়ে ফেলে রিয়েলাইজ করল সামনে কিছু একটা অঘটন ঘটেছে, ক্ল্যারিওনেট, ট্রাম্পেট, হারমোনিয়াম, বাঁশি – সব স্তব্ধ, লর্ড ক্লাইভ
প্রচুর ফেস পাউডার লাগিয়ে ষ্টেজের বাইরে দাঁড়িয়ে ঘামছে আর হাসি চেপে পরের ডায়ালগ মনে
রাখার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে,
সবাই ভাবছে কি করা যায়, শেষে ভঁদুজেঠু উঠে চড় থাপ্পড় দিয়ে নামালো
ষষ্ঠীকে স্টেজ থেকে। শুধুমাত্র এই ষষ্ঠীর ভয় দেখিয়ে আমার বোন ঝুমা কে দিয়ে আমি এক ঘন্টা
পিঠে সুড়সুড়ি খেয়েছি অষ্টমীর দুপুরে। আমি যখন যৌবনের দোরগোড়ায়, একবার পুজোয়
গিয়ে শুনলাম ষষ্ঠীর মা, মারা গেছে,
এখন খেতে পায়না, শরীর খুব খারাপ। পরের পুজোর থেকে ষষ্ঠীকে
আর দেখিনি আমরা।
দামোদর দুয়ার পেরোলেই যে বাড়িটা, সেটা কালী
পিসি ভুলি পিসিদের। তারা আমার সম্পর্কে পিসি বটে, কিন্তু আমার ঠাকুমার কাছাকাছি বয়স। একজন খুব
মোটা, আরেকজন তেমন নয়। আমাদের শরীক, কিন্তু আলাদা করে কিছু দেখিনি কোনদিন। এরা
ভালই ছিল, কিন্তু কয়েকদিন বাদেই শুনলাম কালী পিসি ভুত হয়েছে। কিছুদিন পরে
ভুলি পিসিও ভুত হল। আমার চাপ হল,
আমি ঐ জায়গাটা কিছুতেই একা পেরোতে পারি না। সলিউশন বেরল বুবুদার
কথায় – ভুত আগুন কে ভয় পায়, তাই পকেটে দেশলাই নিয়ে ঘোরো। সামনে এলেই ফস্
করে জ্বেলে দাও, ভুত ভ্যানিস্। আমাদের বাড়িতে বাথরুম বলে কিছু ছিল না – শুধু রাত
বিরেতে হাগু পেলে একটা পায়খানা ঘর,
তাও বাড়ির বাইরে, পাঁচিলের ওপাশে, জামির লেবুর
গাছের নিচে, ডোবার পাশে। বিভীষিকা! ওই জামির গাছে ব্রহ্মদত্যি আছে, সেটা সবাই
জানত, নতুন কিছু না, কিন্তু ডোবাতে নাকি মেছো ভুত থাকে, সে আবার
আরও ভয়ঙ্কর। খুব সাবধানে খাওয়া দাওয়া করতাম, তাও দু একবার যেতে হয়েছে সেখানে সন্ধের পর।
বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখতাম বাইরে। আরে ছোট বাথরুম পেলে অন্য ব্যাবস্থা – দু খানা
ইঁট দেওয়া একটু শান বাঁধানো জায়গা একদম এক কোনায়, তার নাম ওখানের ভাষায় “মুত্কল”। অতএব বড় কাজ ও স্নান করতে সবাই খালের দিকে যেত। ঠাকুমার সঙ্গে
গেলে আমাকে কন্ট্রোল করা একটু মুশকিল হতো, অত জল দেখে দাপিয়ে বেড়াতাম, তখন খুকন
পিসি, যে কিনা ভুলি পিসির খুড়তুতো বোন, সে হঠাৎ
সিংহের ডাক ডেকে উঠত। এখন ভাবলে হাসি পায় যে সিংহ মেয়েছেলের গলায় উম উম করে ডাকছে, কিন্তু সেই
বয়সে ওটাতেই বেশ কাজ হতো। সিংহ পিসিমাকে মিস করি খুব।
ভয়গুলো চলে গ্যাছে সব। একটাই ভয় ঘিরে ধরে
মাঝে মাঝে, বাড়ীটা ফাঁকা হয়ে যাবে না তো?
No comments:
Post a Comment