কালী কথা
দুর্গাপুর এ ১৮/১৪ ট্রাঙ্ক রোড এ আমার ছেলেবেলা
টা কেটেছে। যখন ২ বছর বয়স, বনমালী আর ভবানী কাকুদের গাড়ি চাপার অদম্য লোভ কাটিয়ে জেঠু-জেঠিমা
দাদা দিদি কে টাটা করে সেই যে ঢুকলাম, একদম ১০ বছর বয়স অবধি ওখানেই কাটিয়েছি। রাস্তার
এক ধারে কোয়ারটার, অন্য ধারে মাঠ, মাঠের ওপারে সুইপার বস্তি। সবথেকে মজার
ব্যাপার, পাশের বাড়ীতে অপু আর বনি আছে। তারপরের বাড়ীতে ছোট-বনি আর ডাম্পু, তার
পরের টায় টুম্পা। ৩ বছর বয়স তখন,
একদিন জুতো পরাচ্ছে মা, আনন্দে গদগদ হয়ে হঠাৎ বলে ফেললাম, “তোমাকে মারিবো!” মা একটু রাগ করে বললো – “এ আবার কি কথা? মা কে মারবে? ছি ছি!” আমি চট করে
বুঝলাম কেলো করে ফেলেছি, কিন্তু দেওয়ালের ক্যালেন্ডার টা বাঁচিয়ে দিল, বললাম “তোমাকে না, ওকে বলেছি।” মা দেওয়াল এর দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো “ও মা, সেকি কথা, মা কালী
কে মারবে?” উপায় নেই,
এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম “ওই কালী না, জুতোর কালি।”
সেই যে একবার পাস করে গেলাম, তারপর থেকে
কালী আর কালি – এই দুই নিয়ে অনেক ভেবেছি, ব্যবহার ও করেছি। কালীর ড্রেস টা বেশ মজাদার
লাগতো – বেশ স্নান করার সময় কার ড্রেস। কিন্তু কালী নিজেই অ্যাল ড্রেস
এ আর নিজেই জিভ বার করছে কেন,
এটা ঠিক বুঝতাম না। এটা জানতাম যে এই অ্যাল-কালি ব্যাপারটা ছোড়দার
কেমিস্ট্রি বই তেও আছে, তার মানে মিথোলজি আর কেমিস্ট্রি খুব কাছাকাছি ব্যাপার।
একটা
গান শুনেছিলাম, “আমার হাতে কালি, মুখে কালি” – সেটা নিয়ে গান বাঁধার কি আছে সেটা মোটেও বুঝিনি, কারন একবার
বাবার ফাউন্টেন পেন চুষতে গিয়ে ওই গান টার মতই অবস্থা হয়েছিল, কিন্তু তারপর
মা বেদম কেলিয়েছিল, আর কালি টা খেতেও বেশ তেঁতো। তাই নিয়ে গান বাঁধা বেশ বিরক্তিকর
ব্যাপার একটা। তবে “সাকালি তোমারি ইচ্ছা” গান টা বুঝতাম, গুনগুণ করে
গেয়েওছি, বিশেষ করে কালী পূজোর সময়। কিছুদিন পরে ওই সামনের মাঠে চট্
এর প্যান্ডেল বানিয়ে সিনেমা উৎসব লাগলো – ৭ দিন, রোজ এক সিনেমা দুবার করে। সেখানে “নীলাচলে
মহাপ্রভু” দেখতে গিয়ে কি হয়েছিল সেটা পরে বলবো, কিন্তু সঙ্গে
যেটা হয়েছিল, সেটা হল ৭ দিন ধরে নন স্টপ মাইক এ গান। সেখানেও কালি নিয়ে একটা
গান প্রথম শুনেছিলাম, সেটা হল “কালী কাটা হে, মস্ত্ শ্যামা হে, জাং উঠাকর
ঝুম ঝুম ঝুম, ঝুম বরাবর ঝুম শরাবি, ঝুম বরাবর ঝুম।” একদম অ্যাকশান
প্যাকড্ কালী এপিসোড্, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। অনেকে “মাক্কালি
বলছি” যোগ করে যখন কোনো গোপন খবর দিত, তখন জানতাম
ওটা সারটিফায়েড সত্যি খবর। অনেক পরে, অক্টোবর এর ৩১, ১৯৮৪ নিয়ে
পূর্ণ দাস গান বাঁধলেন, আর সেই সময়েই জানলাম, আরেক রকম কালি আছে, যাদের নাম
আকালি।
No comments:
Post a Comment