করলা
পুজো বাঙালী অনেক ঠাকুরেরই করে থাকে। এক একটা
ডিপার্টমেন্টে একের বেশী ঠাকুর ও আছেন। কিন্তু এঁরা সবাই হলেন গিয়ে স্পেশালিস্ট – এক এক জন
এক একটার বেশী এরিয়া সাধারনতঃ দেখেন না।
গণেশ স্টার্টার হিসেবে জরুরী, কিন্তু তারপরে
মারওয়াড় প্রদেশের দিকেই টানটা বেশী তাঁর। আমাদের জেনারেশনেই প্রমান হয়ে গেছল সরস্বতী
আসলে প্রেমের দেবী, কিন্তু পড়াশোনা নিয়েও তাঁর কিঞ্চিৎ ব্যুৎপত্তি আছে, তাই নিজের
নামের বানানটা এমন রেখেছেন যে সেটা সরোস্সোতী থেকে স্বরশ্বতি অবধি বিরাজ করে, এবং বহু
বাচ্চা শুধু এই বানানের বিটকেলির জন্যেই পুজোর চাঁদা আশানুরুপ তুলতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু
সেই প্রেমের মূল দেবী, অর্থাৎ কিনা প্রেমিকার জন্য উপঢৌকন, কিম্বা সেই
বিদ্যা আহরণের জন্য ক্যাপিটেশন ফী যখন দরকার, তখন কিন্তু বিদ্যাধরীর এরিয়ার বাইরে গিয়ে
তাঁর বোন শ্রীদেবী কে ধরতে হবে। কার্ত্তিক একটু ইম্পোসিং দেবতা, পুজো না
করলেই হুড়কো দেন, তাই তাঁর ব্যবহার পাড়ার খাড়ুস্ আঙ্কেলের কিছু পয়সা খসানোর জন্য।
প্রেম, পড়াশোনা,
বিয়ে –
এসব হলে পরে বংশবৃদ্ধির সমস্যা হলে সেটা শিবের স্পেশালিটি, সমস্যার
সমাধান হলে বা না হলে মন ভালো রাখতে বা ভুলে থাকতে শিবের স্মরনাপন্ন হতেই হয়। বাড়ী
বানালে সত্য, না বানাতে পারলে শুধু নারায়ণ আছেন। সকালে স্নান করার সময়ে সূর্য
আছেন, সন্ধেয় পান করার সময়ে মা কালীর কারণবারি আছে, ছোট বাথরুম
চেপে রাখতে বরুনদেব আছেন, স্বপ্নদোষ হলে চন্দ্র আছেন, বাচ্চার হাগু হলে শীতলা আছেন, গাড়ী খারাপ
হলে বিশ্বকর্মা আছেন, রাস্তা খারাপ হলে জগন্নাথ আছেন, সাপের ফোঁস
সামলাতে মনসা আছেন, শত্রুর রাগ কমাতে শনি আছেন, চন্দননগরের মতো আলোর খেলা করতে জগদ্ধাত্রী
আছেন, এমনকি মৃত্যু আটকে রাখতে ট্যাংরা-তোপসিয়ায় যমের পুজোও হচ্ছে
আজকাল। কিন্তু সবই আলাদা কাউন্টার। মা মঙ্গলচণ্ডী বেশ অনেকটা ওয়াইড স্পেক্ট্রাম কাভার
করেন বটে, কিন্তু তাঁর ব্রততে একটা সহজ সরল খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার বেশী প্রাধান্য
পায়, একটু হাল্কা ইন্টিমিডেশন ও আছে – “হে মা মঙ্গলচণ্ডী, কেন এত বেলা, নির্ধনেরে
ধন দিতে, অপুত্রকে পুত্র দিতে কোরনা হেলা” ইত্যাদির
সঙ্গে “ঠারি ঠুরি পায়রাগুলি, ঠাকুর চল্লেন কৈলাসপুরি, যে করে তার
স্বর্গবাস, যে শোনে তার কৈলাস”
– অর্থাৎ ফলো করলে কিছু একটা পাওয়া যাবেই। কিন্তু উনি বড়ই হোমলি, পাওয়ার থাকলেও
ক্যারিস্মা নেই তেমন। তাই তেত্রিশ কোটির মাঝে কেবলমাত্র একজনেরই সিঙ্গেল উইন্ডো স্কিম, আর তাই নিয়ে
বাঙালী বড়ই বেশী বিহ্বল – তিনি হলেন দুর্গা।
আদতে দুর্গাপুজোর শুরু রথের দিন, যেদিন কাঠামোতে
প্রথম দেওয়া হয় গণিকালয়ের মাটি,
সেদিনই প্রথম পুজো। এর পর দোল, জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, জীতাস্টমী
পেরিয়ে মাতৃপক্ষের প্রথম দিন প্রতিপদে চক্ষুদানান্তে আবার পুজো। তারপর আস্তে আস্তে
টেম্পো বাড়তে থাকে তার, ষষ্ঠীর দিন যখন মা কে বেল গাছ থেকে বরন করে নিয়ে আসা হয়। চাকুরে
বাঙালীর আসল পুজো সেদিন থেকেই,
সবাই একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরতে চাইবে সেদিন। আর বসু বাড়ীর
সকলেই হয় পৌঁছে যাবে নোহারি,
আর না পারলে মনটা অন্ততঃ পাঠিয়ে দেবে ওখানে। বেল গাছ থেকে এনে
মূর্তিতে প্রান প্রতিষ্ঠা তো হল,
কিন্তু গণেশ যে বলছে তার বউ চাই? স্টার্টারের
বউ এনে না দিলে তো পুজো শুরুই করা যাচ্ছে না। তাই পরের দিন ভোরে উঠে কলাগাছের নকল বউ
তৈরি করে নিয়ে চলে যাও জলের ধারে - সেখানে তাতে প্রান আসবে, আর সঙ্গে
আসবেন আসল দুগ্গা মা। সপ্তমির পুজো আর আরতি পেরিয়ে অষ্টমী তে পৌঁছে গেলে মানে অসুর
বেদম পেটানি খাচ্ছে এখন। ক্লাইম্যাক্স তার অষ্টমীর শেষে, নবমীর সন্ধিক্ষণে।
দুর্গা ক্রোধে চামুন্ডা রূপ নিলেন,
অসুরকে নিধন করলেন – প্রথমে তাকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করলেন, তারপর খড়্গ
দিয়ে কেটে নিলেন তার মাথা, শেষে বাম পদের আঘাতে তাকে শুয়িয়ে দিলেন শেষ শয্যায়। তারপরের
পুজো নবমীর, সে পুজো আসলে মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়ের বন্দনা, সেখানে যুদ্ধ
শেষের আনন্দ। শেষে মঙ্গলারতি,
পরিবারের সবার ভালো বাসনা করে, আর সব শেষে
দশমীতে বিসর্জন। বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, সন্ধিক্ষণ দুর্গা পুজোর প্রাইম টাইম।
অলমোস্ট ব্যর্থ প্রেম, অলমোস্ট
ডুবে যাওয়া পরীক্ষার প্রস্তুতি,
অলমোস্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাবসা, অলমোস্ট
বখে যাওয়া ছেলে, অলমোস্ট কিপটে হয়ে যাওয়া বাবা – এরকম অনেক
অলমোস্ট আউট অফ কন্ট্রোল জিনিসের সহজ সমাধান হল সন্ধিপুজোয় অঞ্জলি দেওয়া। তাই সেই নিয়ে
উন্মাদনা যে থাকবেই, সে নতুন করে বলার কিছু কি? আমাদের ছোটবেলায় সন্ধিপুজো রাতের দিকেই পড়তো
বেশী। কেউ অল্প খেয়ে, কেউ উপোষ দিয়ে থাকতো। যারা ঘোর ভক্ত, তারা নির্জলা
উপোষ। অবশ্যই বেশী রাতে পুজো পড়লে চুড়ান্ত ভক্তরাও দেখেছি অনেক সময়ে এমন নিয়মের কথা
বলতো, যেগুলো আছে বলেই কেউ তার আগে জানতো না, যেমন নির্জলা
উপবাসে চিনি দেওয়া শরবৎ খেলে ওটা নির্জলাই থাকে, বিস্কিট বিদেশি জিনিস তাই ওটা ঠিক খাবার নয়
ইত্যাদি। অনেকে ভুল করে লুচিও খেয়ে ফেলতো, আর প্রসাদের ফল মানে তো ঠিক খাবার নয়, তাই ওটা
চলতেই পারে। এই নিয়ম গুলো সবাই খুব নিয়ম করে মেনে থাকে, এবং ব্যাতিক্রমিরা
একটু অতিরিক্ত সন্মান ও পায়।
যখন সিক্স বা সেভেনে পড়ি, তখনি প্রথম
অঞ্জলি দেওয়া শুরু করলাম। খুব থ্রিলিং ওই রাত্রে বেলায় টর্চ নিয়ে খালে স্নান করতে যাওয়া, তারপর বাড়ী
ফিরে পায়ের ধুলো আবার ধুয়ে ধুতি পরে স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে চাপিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে
মন্দিরে ঢুকে পড়ো। হাওয়াই চটিও পরে যাওয়া যাবে না, কারন কেউ নিজের ভাবতে পারে সেটা। দামোদর মন্দিরের
সামনেটা তখন গ্র্যাভেল দিয়ে বাঁধানো ছিল তাই ওই জায়গাটা পেরনোই সবথেকে চাপের ছিল। কিন্তু
পেরিয়ে গেলেই অন্য দৃশ্য। ঢাক বন্ধ আছে এখন। মন্দিরের গর্ভগৃহে ধূমায়িত মা দুর্গা, গত তিন দিনের
ধুনো আর প্রদীপের অত্যাচারে একটু কালচে হয়ে গাছে তাঁর ঘামতেল, গোলাপি বর্ণ
তাই এখন একটু হলদেটে। ডাকের সাজের মাঝের রাংতা যেন একটু বেশী চকচকে এখন, কোথাও রূপালী, কোথাও আবার
ডে লাইট, হ্যাজাক আর প্রদীপের আলো পড়ে সোনালী, অসীমকাকুর
আনা পদ্মফুল তাঁর হাতে, চকচক্ করছে তাঁর তৃতীয় নয়ন, অসুরের বুকের রক্ত টাও যেন একটু বেশী লাল, তার চোখ
দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই দয়া চাইছে সে মায়ের কাছে। মায়ের সামনে আর দু পাশে বড় বড় কাঠের
রেকাবি আর পেতল-কাঁসার থালায় সাজান কাটা ফল আর মিষ্টি, তার সুঘ্রাণ
মিশে গেছে অগুরু, ধুপ আর ধুনোর গন্ধের সাথে। লক্ষ্মী সরস্বতী গম্ভির, গনেশের মুখে
মুচকি হাসি যেন বলছে দেখো এবারে কি হয়, কার্ত্তিকও জয়া বিজয়ার বদলে উদাস হয়ে শুন্য
দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে যেন। ধোঁয়ায় চোখ খুলে রাখা দায়, পুরোহিতের
পাশাপাশি দুজন টহলা ধুনুচিতে কাঠ কয়লা আর ধুনো দিচ্ছে। আর এই সবের মাঝে হ্যাজাকের আলোতে
তিনজন পুরোহিত উচ্চস্বরে মন্ত্র পড়ে চলেছেন, গমগম করছে ভেতরটা, কখনো ঘন্টা
বাজাচ্ছেন তাঁরা, অন্য কেউ কোনো কথা বলছে না, সবাই তাকিয়ে আছে মায়ের চোখের দিকে। ভঁদুজেঠু
শুধু বাইরে গিয়ে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে, সন্ধিক্ষণ শুরু হলে বিষ্ণুপুরের রাজবাড়ীতে
কামান দাগা হবে, নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতায় সেই আওয়াজ ভেসে আসবে চল্লিশ মাইল দুরে, আর ওমনি
শুরু হবে আমাদের খ্যানের পুজো। মন্দিরের গর্ভগৃহের ঠিক সামনে যে এক জোড়া ক্লাস্টার্ড
পিলার, তাদের দুটোতেই মেঝের থেকে ফুট তিনেক ওপরে গাঁথা আছে এক জোড়া
হুক, তাদের দড়ি বাঁধা, সেই দড়িতে বাঁধা আছে কলা, শশা, শাঁকালু, আপেল। কোন
করলা নেই তাতে।
করলা অতি বিদঘুটে ফল। ফল, আমরা যদিও
তাকে সব্জি হিসেবেই খাই। একটা কোলা ব্যাঙের ঠ্যাং বাদ দিয়ে বটল গ্রীন রঙ করে দাও, ব্যাং চোখ
মুখ আর ডাক বন্ধ রাখলে তাকে খুব সহজেই ভালো করলা বলে চালানো যায়। নিমপাতার তেঁতো তাও
গিলে নেওয়া যায়, করলা জাস্ট নেওয়া যায় না। উত্তর ভারতে লোকজন করলার তিক্ততা কমানোর
নানারকম ব্যবস্থা করেছেন বলে শুনেছি, বাঙ্গালীরা আমেরিকা থেকে ভাষাটাও প্রায় নিয়ে
নিয়েছেন কিন্তু আমাদের করলা এখনো তেঁতোই হয়। করলার আবার এক বোন আছে, তার নাম
উচ্ছে, কিন্তু সাইজ ছাড়া কোন কিছুই আলাদা করা করা যায়না। গাড়ীর বাজারে
কম্পিটিশনের তিক্ততার জবাবেই টয়োটা কোম্পানি করলা নাম দিয়ে গাড়ী বের করেছে কিনা জানিনা, যেমন জানিনা
চামুন্ডাকে ফুল বেলপাতা দেবো,
সেখানে কেন তাকে প্রথমেই ডাকছি কালী বলে যদিও কালী পুজো বেশ
কয়েকদিন পরে, তারপরে আবার তাকে করলা বদনা বলে ডাকছিও। করলার মতো বদন? ছ্যা ছ্যা!
জানি চামুন্ডাকে দেখতে মোটেই ভালো নয়, কিন্তু স্টিল, করলার মতো
মুখ ওয়ালা মানুষ হলেও হতে পারে ভাইর্যাল চর্মরোগ হলে, ঠাকুর দেবতার
আবার ওসব হয় নাকি? অনেক বড় হয়ে বুঝেছি যে মন্ত্র টা এরকম –
“ওঁ কালী করালবদনা বিনীষ্ক্রান্তাসিপাশিনী//
বিচিত্রখট্টাঙ্গধরা
নরমালাবিভুষণা//
দ্বিপীচর্ম্মপরীধানা
শুষ্কমাংসাতিভৈরবা//
অতিবিস্তারবদনা
জিহ্বাললন ভীষণা//
নিমগ্নারক্তনয়না
নাদাপূরীতদিঙ্মুখা//
এষ পুষ্পাঞ্জলি ওঁ
হ্রীং শ্রীং চামুন্ডাঐ নমঃ।”
এই মন্ত্র গুগুলে খুঁজলে পাওয়া যায় না, অন্ততঃ আমি
পাইনি গত ৫ বছরে। আমি হলফ করে বলতে পারি যারা এটা পড়ছেন, তাদের নব্বুই
শতাংশ এই মন্ত্রের কথা শোনেনইনি। দুর্গাপুজোর পুষ্পাঞ্জলি সবাই “জয়ন্তি মঙ্গলা
কালী ভদ্রকালী কপালিনী দুর্গা শিবে ক্ষমাধাত্রি স্বাহা স্বধা এষ সচন্দন গন্ধপুষ্পে
বিল্বপত্রাঞ্জলি ওঁ হ্রিং শ্রীং দুর্গাঐ নমঃ” দিয়েই দিয়ে
থাকেন, অর্ধেকটা তো বানী কুমারের মহিষাসুরমর্দিনীতেই গান হিসেবে আছে, বাকি অর্ধেকটা
সব পুজোতেই অলমোস্ট এক, তাও মনে রাখার দরকার
নেই, পুরোহিত বলবেন, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বললেই হবে। আর এখানে ঐ ভজকট
মন্ত্র কিনা মুখস্ত বলতে হবে,
তাও তিন বার নয়, যতক্ষণ না ঢাক বেজে উঠেছে, ততক্ষন বলেই
যেতে হবে, হাতে ফুল থাক বা না থাক। বারো বছর বয়স থেকে মুখস্ত করার চেষ্টা
করছি, কিছুতেই হতো না। বাবা বা মেজজেঠুকে ধরে কাগজে লিখে নিয়ে যেতাম, আর সেই কাগজ
অবধারিত ভাবে হারিয়ে যেত। নিজে বলতে না পারলে ঠাকুমা বলেছিল যে বলছে তাকে ছুঁয়ে থাকলেই
হবে, কিন্তু আবিষ্কার করতাম অনেকেই মনে মনে বলছে, তাই মন্ত্রের
কোয়ালিটি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে,
আর কেউ আবার পুরোটা না বলে মাঝরাস্তা থেকে অন্যকে ফলো করার চেষ্টা
করছে। এমতাবস্থায় ভরসা মুস্টিমেয় কয়েকজন – বড়দের মধ্যে তাঁরা যারা জোরে জোরে বলেন। ভঁদুজেঠু
জোরেই বলতো, কিন্তু বছর দুয়েক পরে দেখলাম একবার বলেই শ্রী শ্রী চণ্ডিকা থেকে
পাঠ শুরু করে দিচ্ছে। বাবা কিম্বা অশোককাকু কে ধারে পাশে পাওয়া গেলে ঠিক আছে, কিন্তু অনেক
সময়েই এদের কাছাকাছি পাওয়া যেত না। সব মিলিয়ে খুব চাপের ব্যাপার হয়ে যেত প্রায়ই।
একজন অবশ্য পার্মানেন্ট খদ্দের ছিল, সে হল বাবাদের
জেনারেশনের কনিস্টতম ভ্রাতা দুর্গাশংকর বসু ওরফে শংকরকাকু। সন্ধিক্ষনের অন্তত ২ ঘন্টা
আগে শংকরকাকু গিয়ে বাঁ দিকের থাম্বার সামনের যায়গাটা অধিকার করে বসে পড়তো। কাকুর পরনে
ধুতি, গায়ে জোড়ের চাদর, কোমরে বাঁধা ওয়েস্ট ব্যাগ, পাশে পাপিয়া
কাকিমা। দুজনেই নিষ্পলক দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কাকুর চোখে
জল। পুষ্পাঞ্জলি শুরু হতেই উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে মন্ত্র পাঠ শুরু করতো, সেই মন্ত্রপাঠ
চলতো বাকিদের শেষ হওয়ার পরেও অন্তত মিনিট দুয়েক। মুশকিল তখন হতো, যখন কাছাকাছি
যাওয়া যেত না, সবাই নিজের মতো করে মন্ত্র পড়ছে, তার মধ্যে
একজনের মন্ত্র দূর থেকে ফলো করাই ভীষণ কঠিন। শেষে প্রচন্ড ক্ষার খেয়ে কলেজে পড়ার সময়ে
মুখস্তই করে ফেললাম মন্ত্রটা। একটা ডিপেন্ডেন্সি কাটলো যাহোক!
এবছর এই প্রথম
শংকর কাকু আসতে পারেনি। মান্টু, আমার খুড়তুতো
ভাই – তার খুব শরীর
খারাপ। লক্ষ্য করলাম, এতদিন ধরে
সবাই ঐ যায়গাটার জন্য হা হুতাশ করতো বটে, কিন্তু এবারে কেউই দখল করার চেষ্টা করছে না যায়গাটা – এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে কুটুদা, অন্যপাশে বৌদি। দশ মিনিটের মামলা, তারপরেই বেজে উঠলো ঢাক, এক এক করে বাইরে বেরিয়ে এলাম সবাই, শংকরকাকু বোধহয় ভেতরেই রইল।
No comments:
Post a Comment