Friday, May 23, 2014

খুনে

খুনে

সোনার দেশ আমার। তাসের দেশের থেকেও বেশী নিয়মনিষ্ঠ, রূপকথার দেশের থেকেও সরল। পাপ বললে সব্বাই ভাবে কুকুরের বাচ্চার ইংরেজি। ব্রিটিশদের তাড়ানোর পরের থেকেই আমরা সোনার দেশ। আমরা সব্বাই ভালো। আমরা শুধুই ভালো চাই।  এখানে খারাপ নেই, অত্যাচার নেই, মেদিনীপুর আছে, সিঙ্গাপুর না থাকুক সিঙ্গাপুরি কলা আছে, কিন্তু কামতাপুর নেই। একদম নেই। এখানে অনেক ধর্ম আছে, কি কি, সেটা রাজনীতিকরা ভালো বলতে পারবেন। তবে ওনারাই বলেছেন, এখানের সব ধর্মের মাঝে একটা ধর্মই আছে, যেটা বলতে নেই, বাকিগুলো বলতে আছে।

আমরা শান্তিকামী মানুষ। আজ অবধি দু হাজার দু শো বছরে একজন দেশি বা বিদেশিকেও খুন করিনি, তা সে যতই বজ্জাত হোক না কেন। হর্ষবর্ধনের কথা থাক, ওনার তো মুন্ডুই ছিল না। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য উনি কি কখনো কাউকে মেরেছেন? অশোক? একবার যুদ্ধে নেমেছিলেন বলে এমন শান্তি শিখেছিলেন যে এখনো পাঁচশো টাকার নোটে গান্ধীজির ছবির পাশে ওনার থাম্বার ছবি। তারপরে ধরুন গজনীর সুলতান মাহমুদ উনি তো গুজরাটে এসে এমন শান্তির বানী শুনিয়েছিলেন, যে তখন নেহাৎ নোবেল প্রাইজ ছিলো না তাই, নয়তো উনি পর পর উনিশ বার নোবেল পেতেন, শান্তির জন্য।  হিমু বলে এক রাজা ধর্ম গেলো ধর্ম গেলো বলে যুদ্ধ করতে গেলেন, বেঘোরে প্রানটাই চলে গেল। শাহ্‌জাহান অত কষ্ট করে মুমতাজের অমন একটা কবর বানালেন, তা নিন্দুকে বলছে ওটা নাকি কোন রাজার মন্দির ঝেড়ে বানানো। যত্তসব!

আমাদের শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তিই আমাদের শক্তি। এখানে কারোর ওপরে খুব ভালোবাসা হলে তাকে ডাকা হয় শান্তির ছেলে বলে। এখানে সবাই ভাই ভাই, অথবা ভাই বোন, অথবা বোন বোন।  এদেশ ভালবাসার দেশ। তাই গান্ধীজিকে কেউ খুন করেনি। টেগার্ট বা ক্ষুদিরামকেও নয়।  সিম্পসনের সাথে বিবাদ করেছিলেন তিনজন, সেই বিবাদে দুজন বেমক্কা মারা গেছলো আর একজনের ফাঁসি, তা সেই বিবাদের কথা ভেবেই রাইটার্সের সামনেটার নাম বিবাদি বাগ। বাগ টা আসলে বাগবিতন্ডা থেকে এসেছে, পরের পার্টটা বাদ দেয়া দেওয়া হয়েছে বাসের গায়ে বানাম লিকতে অসুবিদে হয়, তাই।  সেই সাতচল্লিশের স্বাধীনতার পরের থেকেই আমাদের আরো উন্নতি। আমরা বাস ভাড়া বেড়েছে বলে ট্রাম পোড়াবো, এমন বোকা নই।  এই যে পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলন হল, সে তো শুধু অভিনয়, দুনিয়াকে দেখানো আমরা কেমন লড়াই-লড়াই খেলতে পারি। সেই সময়ে পশ্চিম বঙ্গে একজন যুবকও খুন হননি - মানুদা নিজে সব্বাইকে বিদেশে ভালো চাকরী খুঁজে দিয়েছিলেন। দু একটা বদ ছেলে শুধু শুধুই পুলিশ গুলির টিপ প্র্যাকটিস করার সময়ে বন্দুকের সামনে চলে এলো, তাই বেঘোরে প্রান টা গেলো। তাদের বোনেদের আমরা কেউ রেপ করিনি। ইমারজেন্সির সময়ে সবাই নির্ভয়ে ছিল, কারন অত্যাচার হওয়ারই ভয় ছিল না, খুন তো কোন ছার। এর পরে ঐ যে নিন্দুকে বলে ভি পি সিংহ দলবাজি করে মোরারজি কে সরিয়ে দিয়েছিলেন, সে সব মিছে কথা - আসলে মোরারজী মুত্র খেতেন বলে সবার গন্ধ লাগতো, তাই ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, তাতে মোরারজীর সন্মানে লেগেছিল তাই সরে গেছলেন।  অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে যখন সেনা নামলো, তাদের কামানের মাথায় হাঁড়ি বাঁধা ছিল, যাতে গোলার তেজ কমে যায়। ভিন্দ্রনওয়ালে বলে এক ভদ্রলোক সেই হাঁড়িতে লাড্ডু আছে ভেবে খেতে গিয়ে প্রান হারালেন।  ইন্দিরা গান্ধীকেও কেউ খুন করেনি, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরেও তাই কিছুই হয়নি, বিশেষতঃ দিল্লিতে, সবাই শুধু মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে আর চোখে কালো চশমা পরে  শোক পালন করেছেন, আর যাঁদের হাতে তলোয়ার/ছোরা/বন্দুক ছিল, তাঁরা আসলে কালো চশমা পরে ভালো দেখতে পাচ্ছিলেন না, তাই লাঠির বদলে ওগুলো নিয়ে বেরিয়েছিলেন। যে সমস্ত শিখ ঐ সময়ে চুল দাড়ি কেটে ফেলেছিলেন, সেটা হয় গরমের জন্য কিম্বা মাথায় উকুন হয়েছিল বলে, ভয় তাঁরা মোটেই পাননি। 

আমাদের উন্নত দেশ ও বটে। অনেকেই পাটনা যাননি, তাই জানেন না যে ওখানের গরুরা সত্যিই স্কুটার চেপে ঘুরে বেড়ায়, এবং সেই স্কুটারে ড্রাইভার ও থাকে। আগে গরুদের পায়ে হেঁটে চরতে হতো, সেই দেখে ওখানের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে না পেরে ঐ ব্যবস্থা করেছিলেন।  রাজা ভাইয়া বলে একজন আছেন, তিনি আসলে আলোকনাথের ভাই। আরেক রাজা বাবু আছে, তিনি রাজা ভাইয়ার মাসতুতো ভাই নিশ্চয়ই। আর একজন তেলুগু ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি তো সুটকেসে টাকা আছে ভেবে দ্যান নি - আসলে নিজের ব্যবহৃত জাঙ্গিয়া দান করছিলেন এক সুটকেস কারন এখন আর ব্যবহার করেন না, কোন লোভী সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থক সেই জাঙ্গিয়া চুরি করে নিয়েছে পরবে বলে, আর তার বদলে ঠেসে দিয়েছে টাকা। 


শান্তির দেশ, তাই মেদিনীপুরের গ্রামেও কেউ কখনো খুন হননি - ওগুলো সব আত্মহত্যা, আগেও, এখনো  কিছু ক্ষেত্রে ওগুলো সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দেওয়ার প্রতিবাদে জীবনদান। পশ্চিমবঙ্গে এখনো অবধি যত ধর্ষণ হয়েছে, সবই আসলে সাজানো কিম্বা সামান্য ঘটনা - মুখ্যমন্ত্রীরাই বলে দিয়েছেন, তাই এই নিয়ে প্রশ্ন করা মানে আপনি কিছুই জানেন না অথবা আপনি মূর্খ কিম্বা মাওবাদী। সঙ্ঘও হতে পারেন। পাঞ্জাবেও কেউ কোনদিন খুন হয়না, উগ্রপন্থা বলে ওখানে কিছু নেই, সরকার ও তাই কাউকে কিছুই বলেন না, পুলিশ আর মানুষ ওখানে ইয়ার দোস্ত। কাশ্মীরে তো কিচ্ছু হয়নি কখনো?  ওগুলো সব মার্কিনি দক্ষিন পন্থার কালো হাত, ভাই পাকিস্তান ওদের কথায় এসব দেখন্দারি করতে বাধ্য হচ্ছে, কারন ওরা গরীব আর আমেরিকা ওদের টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে। দেখুন না, আমেরিকা টাকার জোরে প্রথমে সাদ্দামকে, পরে বিন লাদেনকেও মেরে দিলো, পাকিস্তানের সাধ্য কি তার মধ্যে বোম্বেতে লোক পাঠায়? টাকা দেবে কে? যার দেওয়ার কথা, সে তো ভারতবন্ধু, তার এদেশ বাসের স্মৃতিতে ধর্মতলায় জুতোর দোকান হয়েছে।

আমরা শুধু নিজেদের দেশেই শান্তির বানী প্রচার করি না, আমাদের আসে পাশেও এর জোর প্রভাব। বাংলাদেশে আমরা তো স্বাধিনতা সংগ্রামে সমর্থন জানাতে কিছু খুন করেছিলাম বটে,কিন্তু আমাদের ওখানে আর কোনো স্বার্থই ছিলনা, শুধুই বন্ধুতা। আমাদের ভদ্রতা দেখে পাকিস্তান, তারাও এত ভদ্র হয়ে গেছে, যে তাদের বর্তমান রাজার নামই শরীফ। আমরা মাঝে মাঝেই ভাবের ঘোরে ওদের সঙ্গে লোক পালটা পালটি করি, যায় কম, আসে বেশী, আর রাতের মেলায় এলে পাসপোর্টও লাগে না, এমনকি অস্ত্র নিয়েও আসা যায়। এই বাংলাদেশের কথাই ধরুন - ওখানেও তো মৌলবাদীরা নিশ্চিহ্ন। ওখানে তাই এখন সবাই হাসেন শুধু। একজন হাসেন না, তো সে তাঁর নাম দিয়েই চেনা যায়, আশা করছি উনিও কোন একদিন চাপতে না পেরে ফিক করে হেসে ফেলবেন। ওখান থেকে যাঁরা আসেন বনগাঁ-গেদে দিয়ে, তাঁরা সবাই আমাদের ভাই, তা তিনি আমার জামাতা হন, বা জামাতের লোক। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের রামায়নের পর থেকে মিত্রতা হয়ে গেছে। যেটুকু খামতি ছিল, সেটা সেই সঙ্ঘমিত্রার সময় থেকে একদম জমে ক্ষীর। আমরা ওখানে প্রতিনিয়তঃ লোক পাঠাই, একবার সেনা পাঠিয়েছিলাম বলে ওদের খুব আনন্দ হয়েছিল, তাই মিছিলে এমন ফটকা ফাটালো যে রাজীবকে চলেই যেতে হল আমাদের ছেড়ে। উনি থাকলে তাও শাহ্‌জাদাকে দেখতে হতো না, সে রাশিয়াতেই বেশ জীবনটা কাটিয়ে দিত।  তা যাই হোক, এখন ওখানে তামিল আর সিঙ্ঘলিরা গলায় গলায় ভাব করে রাস্তায় বেরোয়, এমন, যে একে অপরের দাদের ওপরে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে সেলিকল লাগিয়ে সেই হাতেই দই ভাত মাখে, খায়ও। নেপালের তো ঐ বলতে নেই ধর্ম নিয়ে মাতামাতির শেষ ছিল না, কিন্তু কি হল, শেষ অবধি নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে ফুল ফ্যামিলি একদিনেই যাকে বলে লাইক অ্যা ডাইমন্ড ইন দ্য স্কাই? আমাদের ওখানে ঢুকতে দেবে না বলেছিল, কিন্তু এখনো দেয় তো। তবে? আর চীন? আরে মশয়, চিনি খেয়েছেন তো? ও কোথা থেকে এলো? চীন থেকেই না? সেই কবেই আমদের ন্যাতা আমা লগে কয়্যা গেসেন চীনা গো চয়্যারম্যান, আমাগো চয়্যারম্যান। অগো লগেই না আমরা আমরা আমদানি করলাম কমিউনিষ্ট? কমিয়্যুন অর্থে সবাই, ইষ্ট অর্থে ভগবান। ওখানে সবাই ভগবান, একদম সবাই না হলেও দলের ওপরের দিকে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো বটেই।  বেশ ছিলাম, এর মাঝে শালা বজ্জাতের দল কোত্থেকে ইষ্ট ফেলে নিয়ে এলো অ্যাল। ছোট বেলায় প্যান্ট পরতে ভুলে গেলে বড়রা বলতো অ্যাল দেখা যাচ্ছে তাই এরা যে সবাই ঐ করবে, তা আর বলতে? সে যাকগে, এইবারে ওরাও নেই, এরাও নেই। এরা একটু ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বটে, কিন্তু সেই দুই আর দুই। গ্রেসের গ্রেস দিয়ে পাস পাঁচ। আর আমরা? ভরা যুবতীর বুকের মতো, চৌঁত্রিশ।


এতো কিছু ভালোর পরে একটাই জিনিস ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে - শেষে কিনা দেশের একমাত্র খুনেটা রাজা হয়ে বসবে? যে আমরা এত কালচারে বিশ্বাস করি যে আমাদের কালচারকে কালআট বা পরশুষোলো বলা যায়, যে আমরা শূন্য আবিষ্কার করেছি বলে ঐ না ধুয়ে জল খাই না, সেই আমাদের রাজা এই লোকটা হবে? যে বাংলার সীমান্তে বাংলাদেশ, আর তার বর্ডারে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, সিকিম আর হোয়াট নট, সেই বাংলার থেকে মুকুল, আম ও হয়নি সে এখনো, কচি, সে মুকুল পাঠাতে হবে দরবার করার জন্য? পতিবাদ করলে হয় না? বিধানসভায় এখনো কিছু চেয়ার টেবিল গোটা আছে, চিন্তা নেই। বিগেডে চলে আসুন, তারপর যাওয়া যাবে একসাথে।

আপনি আচ্ছা লোক তো মশয়? পুরো লেখাটা পড়লেন? না না, শ্লেষ নেই, বিশ্লেষন করে দেখুন। আপনি নিশ্চয়ই খূঁজছেন লেখক কোন দলের? বাম? দক্ষিণ? সঙ্ঘ? সিমি? হতেই হবে? এ যেন সেক্স এর মতো পুরুষ, নারী, উভকামী, সমকামী সব চলতে পারে, কিন্তু কিছুতেই লিখতে পারবেন না নির্লিপ্ত অথবা অতিকামী সে আপনি যতই আঠেরো বা আশী, যাই হোন। আর আপনি যদি এখনো সেটা না খোঁজেন, যদি আপনার মনে হয় নিরপেক্ষ বলে কিছু হয়, তাহলে লেখক আপনার বন্ধু হলেও আপনি বড়ই একা, কিম্বা আপনি আজকে বউ বাড়ী নেই বলে ভরপেট্টা মদ খেয়েছেন।  বরং যদি লেখক কে ফোন করে ধমকাতে পারতেন, কিম্বা পুলিশ দিয়ে হুড়কো, নিদেন পক্ষে হাতে ধরে বেধড়ক মার, তাহলে আপনি মানুষের সাথে আছেন। নয়তো আপনি ভেড়া। দলে ভিড়ে যাওয়াটাই এখানে নিয়ম।  ছেলের স্কুলের একটা ফর্মে কাস্ট জানতে চেয়েছিল। আমি লিখেছিলাম নট অ্যাপ্লিকেবল। একজন শিক্ষিকা হন্তদন্ত হয়ে এসে আমাকে খুঁজে নিয়ে বললেন এ সব অনাচার চলবে না, কাস্ট ইজ মাস্ট। আমি লিখে দিয়ে এলাম আদিভৌত-জ্বরাথ্রুঠ। ওনার চোখে জিজ্ঞাসা তারপরেও ছিল, কিন্তু শেষ অবধি খুব নিপীড়িত কোনো দলের লোক ভেবে চলে গেলেন।

ধর্ম থাকলে ক্ষতি কি বলুন তো? না থাকলেই বা কি হয়েছে? ধর্ম আছে বলে কি জিরাফ নেই? আচ্ছা, জিরাফের ধর্ম ছাড়াও তো তাকে চেনা যায়, তাই না? মানুষকে যাচ্ছে না কেন? কর্ম আর কাজ তো ভুলেই মেরে দিয়েছি, ধর্ম আছে সেটা না ভুল্লেও চলে, আবার ভুল্লেও ক্ষতি নেই। আমার ধর্ম আমার, আপনার ধর্ম আপনার, কিন্তু আমি আর আপনি আগে তো জন্মালাম, তার পরেই না ধর্ম এলো? আমি ধারমিক হয়ে মন্দিরে বা মসজিদে যেতে পারি, কিন্তু সেই আমিই আবার আপনার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গর্তে আটকে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে পারি সে ব্যাটা বুঝবেও না আমি কোন ধর্মের আর আপনি কোন, সে শুধু আমাদের দুয়ের হাতের জোরে গর্ত থেকে উঠে পড়বে, বাঁচবে রূগীটা। 

Saturday, May 17, 2014

রূপকথার র‍্যাম্বো

রূপকথার র‍্যাম্বো

বোম্বে প্রেসিডেন্সির এক কোনায় ভাদনগরের রেল স্টেশন। সেখানে ঘাঞ্চী তেলী মূলচাঁদের ছেলে দামোদরের চায়ের দোকান। দামোদরের চার ছেলে, দুই মেয়ে। সমু, নরেন, প্রহ্লাদ, পঙ্কজ এই চার ছেলে, আর দুই মেয়ের নাম অম্রূত আর বাসন্তী। এর মধ্যে সমুর দোকান টোকানে মন নেই, সে পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। নরেন আর প্রহ্লাদ বাবার চায়ের দোকানে পালা করে হাত লাগায়, আর পঙ্কজ? সে তো অনেক ছোট।

নরেন মেজো।

একদম ছেলেবেলা থেকেই রাম আর রামের ধনুকের প্রতি তীব্র টান। পাড়ায় এক বিলেত ফেরত সাহেবের ছেলে ছিল, সে নরেনের বন্ধু। আমেরিকায় জন্ম, তাই দেশি ভাষায় ভয়ঙ্কর অনীহা। সে তার ইংরেজির ভাঁড়ার ঘেঁটে নাম দিয়ে দিলো রামস বো। সাহেব দের তো আ বলতে খুব কষ্ট হয়, তাই তারা ইংরেজি এ কে বলে অ্যা। তাই রামস বো, ধীরে ধীরে র‍্যামস বো, এবং শেষে র‍্যাম্বো তে পরিণত হল।

তারপরে সে অনেক কথা।

র‍্যাম্বো বড় হচ্ছে তখন। বাবার দোকান ছেড়ে দাদার সঙ্গে দোকান দিল। সেই চায়ের দোকান। সেই কোন ছোট্ট বেলায় তেরো বছর বয়সে নমো নমো করে বিয়েটা সেরে ফেলেছিল। তখন ভাবে নি, যে এক সময়ে মানুষজন তাকে নমো বলেই ডাকবে। দুধের রাজ্যে বেশ ছিলো চায়ের দোকান দিয়ে, হঠাৎ পাগলামি চাপলো মাথায়।

বিদেশের সঙ্গে এদেশের তফাৎ হল বিদেশে শুধু এক ধরনের, কিন্তু এখানে দু ধরনের আর এস এস ফিড হয়। একটা আসে ইন্টারনেট দিয়ে, আর অন্যটা হাতে হাতে, সেবক দের হাত ধরে। চা ওয়ালার ছেলে, সে ইন্টারনেট কোথায় পাবে, তাই অন্য আর.এস.এস ফীড টাই নিয়ে কাজ করতে লাগলো র‍্যাম্বো। বউটা তেমন জমেনি, আর তার দেশে বৌ আর বোন একই রকম, কারন সব মহিলাই নিজেদের বে(হে)ন বলেন, তাই র‍্যাম্বো চলে গেলো বউ কে ছেড়ে, তীর্থ করতে। মাস দুই বাদে ফেরত এলো অবশ্য, কারন সেই ফিডের আকর্ষণ, আর পয়সাও ফুরিয়ে গেছে। র‍্যাম্বো ততদিনে বুঝে গেছে, পয়সাই সব। বৌ এর কাছে ফেরৎ যায়নি আর। বৌ যে আছে, সে কথা সে প্রথম বলল এই দু হাজার চোদ্দো সালে।

সঙ্ঘ থেকে দলে চলে এলো র‍্যাম্বো। ডেপুটেশান। পাল্টাতে থাকলো সে। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি শরীর সব সময়েই ফিট ফাট, পরিষ্কার করে কাটা চুল দাড়ি, পাকতে শুরু করেছে যদিও। পরিস্কার করে কাচা জামাকাপড় - দরকারে কুর্তা, আরো বেশী দরকারে থ্রি পিস স্যুট। নো স্মোকিং, জল আর দুধ ছাড়া অন্য কিছু পান করে না। নারী সংসর্গ প্রায় নেই বললেই হয়। অসম্ভব মাতৃভক্ত। তীব্র স্বাধীনচেতা, কারুর কথা শোনে না, কাউকে বলতে দেয় না, তার কথাই শেষ কথা। দরকার ছাড়া কথাও বলে না, ইন্ট্রোভারট। আমেরিকায় করে আসা তিন মাসের ইমেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স গুলে খাওয়া হয়েছে, র‍্যাম্বো কে নিয়ে উন্মাদনা শুরু হল। পুরুষরা বললেন এই তো, রাজা এসে গেছে, মেয়েরা বললেন কিত্নে সেক্সি ছে। এরকম করতে করতেই র‍্যাম্বো এক সময়ে গাঙ্গু তেলী থেকে রাজা ভোজ। একটা রাজ্যের রাজা হয়ে গেল সে।

আমাদের বাবাই যে গ্রামে থাকে, তার নাম বোধ্‌রা। ভারি সুন্দর গ্রাম, তার থেকেও ভালো মানুষজন। তার সঙ্গে নাম মিলিয়ে দেশের পশ্চিম প্রান্তে আছে আরেকটা জায়গা, কিন্তু দু যায়গায় মিল খুবই কম। সেই পশ্চিমের গ্রামে মানুষ থাকে না, থাকে কিছু হিন্দু আর কিছু মুসলমান। তারা একবার খুব কামড়াকামড়ি করেছিল করবেই তো, মানুষ তো আর নয় তো কেউ কেউ বলতে শুরু করলো যে র‍্যাম্বো নাকি এসব ইচ্ছে করে করিয়েছে। ভাগ্যিস দেশে এখনো আইন আছে, তাই কোর্টে গিয়ে প্রমান করিয়ে আনা গেলো যে ওসব বাজে কথা। যারা বলেছিল, তারা এখন নেই, কিম্বা তারা কথা বলে না।

মার্কিন মুলুকেও আলোড়ন উঠেছিল বার তিনেক ভিসা ক্যান্সেল হল, কিন্তু র‍্যাম্বোর কিছু আসে যায় না তাতে। তার দেশে মদের দোকান নেই, লোকজন মদ খেতে পাশের রাজ্যে যায়। রাস্তা ঘাট চকচকে, চারিদিকে কারখানা, সবুজ খেত, পাকা বাড়ীর ফাঁকে কাঁচা বাড়ী চোখেই পড়েনা প্রায়। সারা দেশ নড়ে চড়ে বসলো। এমন উন্নতি তো দেখা যায়নি অনেকদিন? রতন টাটা দিদির খেলায় তাল সামলাতে না পেরে চলে গেলেন, তাঁর পাশে দাঁড়াল র‍্যাম্বো। আদানি রা তো নিজের দেশের লোক। ফিল গুড ফ্যাক্টার কাকে বলে, র‍্যাম্বো দেখিয়ে দিল চোখে আঙ্গুল দিয়ে। ঠিক যেভাবে শেয়ার বাজারে দাম বাড়তে থাকে মানুষ যখন ভাবে নিজে ভালো আছি, সেই "ভালো থাকবো", এই আশাতেই মনটা ফুরফুরে হতে থাকল দেশের মানুষের।

এমন করতে করতেই শাহাজাদার মুর্খামির ভার যখন অসহ্য হয়ে উঠেছে দেশবাসীর কাছে, র‍্যাম্বো উঠে এলেন জন র‍্যাম্বোর মতোই একটা ইমেজ নিয়ে। সঙ্গে মিডিয়া, পেছনে সঙ্ঘ, আর অগ্রে বর্শার ফলার মতো চকচকে এক মানুষ এতো ডিটেলে ক্যাল্কুলেটিভ ইমেজ তৈরি এই ভারতে এর আগে আর হয়নি। দেশবাসীর চোখে ধাঁধা লেগে গেল।

সময় এলো দেশের মানুষের রায় দেওয়ার। দেশের পরিবর্তনের ভার যে কি ভার, বঙ্গবাসী তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে বছর তিনেক আগে, তাই বাংলাদেশ রাজী হয়নি আবার একটা পরিবর্তন দেখতে, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ-বিহার-পাঞ্জাব-রাজস্থান-কর্নাটক ভারতবর্ষের বেশীর ভাগ টাই কমলা হয়ে গেল, এন ডি টি ভি তে গ্রাফিক্যাল রিপ্রেজেন্টাশানে দেশটা একটা বড় পদ্ম পুকুর বলে মনে হয় যেন। দিদি বললেন বটে পোটেস্ট করুন, কিন্তু কেউ করলো না। দক্ষিনে কাণীমোঝির বাবা বললেন তাঁর কিছুই বলার নেই। চন্দ্রবাবু সীমাধরায় ফেরত এলেন দশটি বছর পরে, তিনিও র‍্যাম্বোর সাথে। আম্মা যদিও তাঁকে আর দরকার নেই র‍্যাম্বোর, তিনিও সাথে। যে র‍্যাম্বো চা বেচা দিয়ে শুরু করেছিল, ভাদনগরের স্কুলে অ্যাভারেজের বেশী নম্বর কখনই পায়নি, সেই নাটক আর ডিবেটের ফ্যান নিজের পাঁচশো কোটি ফ্যানের হাওয়ায় আজ দেশের রাজা।

সারা দেশ আবেগে ভাসছে। সবারই মনে হচ্ছে কি ভালো, কি ভালো! কাল থেকে চাল পনেরো টাকা, আর ডাল ৫ টাকা কিলো হয়ে যাবে। আর না হলেই বা কি, মনটা ভালো আছে তো, সেটাই শেষ কথা। বামপন্থা বলে আবার কিছু হয় নাকি? ধরমনিরপেক্ষতা? এদেশে তো ধর্ম একটাই, তাহলে সেখানে আবার নিরপেক্ষতা টা ঠিক কি জিনিস? যাঁরা একটু চিন্তাশীল, তাঁরাও বলছেন ইকনমি টা তো ভালো হবে? মার্কিন মুলুক কি অজুহাত দেখিয়ে ভিসাটা এবারে অন্ততঃ দেওয়া যায়, সেই নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছেন। খুব হিসেব করে যাঁরা চলেন, তাঁরা বলছেন কিছু ভালো জিনিস তো দেখেছি গুজরাটে, দেখা যাক না কি হয়। চারিদিকে আশায় ভেসে আছে মানুষ।

র‍্যাম্বোর সোমবার অভিষেক। সারা দেশ চেয়ে আছে তার দিকে। আশা অনেক। ভরসাও করেছে দেশবাসী। চিন্তা একটাই। র‍্যাম্বোর দলের এক রাজা কবিতা লিখতেন, তাঁর একটা লেখায় এরকম একটা কথা ছিল - (এটা ভাব চুরি শুধু, কবিতার দায় লেখকের, রাজার নয়)

উচ্চতার ওপরে

ভগবান, যা কিছু করেছি সব, ওপরে ওঠার জন্য।

এখান থেকে পৃথিবী টা বড়ই সুন্দর।
দুঃখ গুলো সব ছোট হয়ে গেছে,
ব্যাথা দেওয়ার মতো কাছে কেউ নেই এখানে।
কারো কান্না শোনা যায় না আর।
হাসিগুলো ফিকে হয়ে গেছে, কিন্তু মুখ দেখে সুখ পাই।

সবার মাথা দেখতে পাই আমি,
সব্বাই আমার পায়ের নিচে দিয়ে যায়।
মাথার ওপরে যাদের পা ছিল
তারা সবাই আমার নিচে এখন।
আমার মাথায় কারো পায়ের ধুলো পড়েনা তাই আর।

তুমি ছিলে সঙ্গে, তাই উঠেছি, ওপরে, আরো ওপরে।
আরো উঠতে চাই।
জানতে চাই যেখানে কেউ যায়নি, কেমন লাগে সেখানে?
সেখানে কি পাখি আছে? তারা কি গান গায়?
গাছ আছে? ফুল ফোটে সেই গাছে? কি রং তার? নাকি সাদা?
সেখানে মেঘেরা কি স্নান করাবে আমাকে?
চাঁদ কি গল্প বলে যাবে?

তুমি থেকো সঙ্গে, উঠতেই থাকবো আমি
আরো, আরো ওপরে।
থামবো না, ভগবান।
শুধু একটাই জিনিষ চাই তোমার কাছে।
তুমি ভগবান, আমার
সঙ্গে থেকো। আর তখন আমায় মানা কোরো আরো ওপরে উঠতে,
যখন নিচের কিছুই দেখা যাবে না আর,
ওপরে উঠে নিচের কথা ভুলতে চাই না আমি।
নয়তো আমার অমরত্ব চলে যাবে।

র‍্যাম্বো, নিচের কথা ভুলে যাস নে ভাই। নিচের কথা ভুলে গেলে দেশের মানুষ তখন ফের বলবে নমো, ঢের হয়েছে, এবার নামো। সে কি কারোরই ভালো হবে?

১৭ মে, ২০১৪


Monday, May 12, 2014

পুরী পুনরায়

পুরী পুনরায়

দিনকয়েক আগে পুরী চলে গেলাম হঠাৎ। পুরী যাওয়া নতুন কিছু নয়, বুবুদা এর আগে সতেরো বার পুরী গেছে, ইনক্লুডিং তিন বার হানিমুন হ্যাঁ, মানে এরকম নয় যে বুবুদা বার বার বিয়ে করে আর পুরী যায় প্রথম দু বার মীরা কাকিমা আর কাকুও সঙ্গে গেছলো কিনা, তাই হানি আর মুন দুই থাকা সত্ত্বেও সন্ধি হয়নি, তাই তৃতীয়বার। বাকি বার গুলো অন্যান্যবারে যা যা দেখা হয়নি সেগুলোর জন্য এবং বিভিন্ন লোকের সঙ্গে। এবারে গেল আমার সঙ্গে যায়নি আগে কখনো, তাই।

পুরী আমিও কম যাইনি। আমার জন্মের আগেই আমার পিতৃমাতৃকা আমার ঠাকুমা ও সেজজেঠু-জেঠিমার সঙ্গে ঘুরে এসেছে পুরী তখন মধুচন্দ্রিমা অমনই হতো। আমার ছোটবেলায় যাওয়া হয়নি ঠিকই, কিন্তু সেই কোন কলেজে পড়ার সময়ে ডিক্‌, উজ্জ্বল আর অমিতের সঙ্গে গেছলাম সে ভারি মজার ট্রিপ হয়েছিল, বলবো একদিন সময় করে। তারপর সত্যজিৎ রায়ের হত্যাপুরীর হাত ধরে বার বিশেক তো হবেই। শেষমেষ এই সেদিন, ২০০৯ এ গেলাম বৌ আর ছেলের সাথে, সেবারে শুধু গিয়ে ক্ষান্ত হইনি, বাঁ ঠ্যাং টাও ভেঙ্গে এসেছিলাম সে গল্প অন্য সময়ে। কিন্তু এবারের টা সত্যিই স্পেশাল, কারন সঙ্গে বুবুদা।

রোববার, সন্ধ্যায় বাড়ীতে বসে ই-বে তে কিছু কেনা যায় কিনা খুঁজছি, বুবুদা ফোন করলো। গুড ফ্রাইডের ছুটিতে শিলং যাবি? অর্থাৎ পরের শুক্রবার। আমি এক কথায় নাকচ করে দিলাম। শুক্রুবার গিয়ে রোববার ফিরব, গায়ের ব্যাথা মরবে না, পয়সার শ্রাদ্ধ। বরং নর্থ বেঙ্গল যাই? টিকিট নেই তো! তাহলে আমাদের ঘরকা মুরগি দীঘা, কিম্বা তার আশেপাশের কোথাও? বুবুদা ঠিক আছে, হোটেল খুঁজি তাহলে বলে ফোন রেখে দিল। একটু পরে আবার ফোন বাবু, পুরী যাবি? আমার আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। বুবুদা+সী বিচ = পুরী ছাড়া আর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি বললাম, যেতেই পারি, কিন্তু টিকিট কই? বুবুদা বলল সেটা হয়ে যাবে, কে একজন এজেন্ট আছে, সে কেটে দেবে। হোটেল? সেও বুবুদা দেখবে। ব্যস, আর কি, যাত্রী গণ দয়া করি ধান দিয়ন্তি, হাওড়া-পুরী শতাব্ধী এক্সপ্রেসো চারি নম্বর প্ল্যাটফর্ম উপরে আসিব।

বুবুদার মেয়ে মেঘাই, বুবাই এর থেকে জাস্ট আড়াই মাসের ছোট কিন্তু আড়াই গুন ডানপিটে। তার পোষাকী নামও শতাব্ধী। কিন্তু তার নামের ট্রেন মোটেই ডানপিটে নয় ধীরে সুস্থে চলতে চলতে পুরী পৌঁছল যখন, রাত তখন অনেক, সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। ভাগ্য ভালো, ভোটের দিন হওয়া সত্ত্বেও এক খানা মারূতি ভ্যান ছিল, যদিও আমরা বলেছিলাম ইনোভা। হোটেলটার নাম সোনার বাংলা, লাইট হাউসের পরেই, সমুদ্রের ওপরে একদম। সেখানে পৌঁছে বুবুদা গাড়ী নিয়ে কিঞ্চিত বাক বিতন্ডার অবতারনা করার চেষ্টায় ছিল, কিন্তু এক তো ঘুম পেয়ে গেছে, তার ওপরে একজন বাঙ্গালী কর্মচারী যখন বললেন পুরীতে নাকি মাত্র চারটে ইনোভা আছে, বুবুদা ক্ষান্ত দিল, কারন অতটা জার্নি করার পরে এটা নিয়ে তর্ক করার দম শেষ তখন। ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা।

পরের সকাল দুপুরটা মনে মনে অনেক বেড়ালাম ফিসিক্যালি একবার সমুদ্রের ধারে ছাড়া একবার স্পিরিটের দোকানে গেছলাম শুধু, অন্য কোথাও যাওয়া একটু চাপের হত, বেদম রোদ, তবে বিকেলে জগরনাথো দরশনো তে আমার না তো ছিলই না, বরং ইন্টারেস্ট ছিল বলতে পারি। পুরীর মন্দির তৈরি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি, পুরীর রাজা নাকি রথযাত্রার সময়ে রাস্তায় ঝাড়ু দেয়, তাও আবার সোনার ঝাঁটা দিয়ে, পুরীর মহাপ্রসাদ রান্না হয়  হাঁড়ি স্ট্যাক করে, তাতে নাকি ওপরের হাঁড়ির ভাত আগে সেদ্ধ হয়, এগুলো তো গেলই। এছাড়াও একবার পড়েছিলাম জগন্নাথ আসলে শ্রীকৃষ্ণ, সুভদ্রা তার বোন আর বলরাম ভাই, কিন্তু এখানের মূর্তির এই ফর্ম এর কারন নাকি জগন্নাথ আসলে ট্রাইব্যাল দের দেবতা, অথবা কোনো ট্রাইব্যাল ঠাকুরকেই শ্রীকৃষ্ণে কনভার্ট করেছিল কোন এক হিন্দু রাজা। পুরীর অতীব ভদ্র পন্ডারা এখন কেমন ব্যাবহার করেন, সেটাও দেখার ইন্টারেস্ট ছিল।

পুরীর যে কোনো হোটেলেই একজন ম্যানেজার থাকেন, কিছু বেল্ বয় থাকে, কুক থাকে, ঝাড়ুদার-মেথর থাকে, আর থাকে একজন ফিট করা পন্ডা, আমরা বাঙ্গালীরা যাকে বলি পান্ডা। এই হোটেলেরও ছিল, এবং সে ঠিক সন্ধ্যে ছটার সময়ে হাজির হল। বয়স আর চেহারা দেখে একটু সন্দেহ হল, জিজ্ঞেস করায় জানালো যে সন্দেহের কিছু নেই, সে মোটেই পান্ডা নয়, পান্ডা অনেক ব্যাস্ত মানুষ, সে তাঁর অধীনে কাজ করে শুধু। সে তার বাইক নিয়ে আগে আগে চলল, পেছনে বুবুদা কে বসিয়ে, আর আমরা চারজনে, মানে আমি, সুপর্ণা, বৌদি অর্থাৎ উত্তরা আর মেঘাই, পেছে পেছে, অটো তে।

পুরীর এই সব গলি বেনারস কেও হার মানাবে, এত সরু, কিন্তু বৈচিত্র নেই তেমন। এক বুড়ো বসেছিল একটা পুরনো বাড়ীর বারান্দায়, হলুদ সোডিয়াম ভেপারের আলোতে তাকে অদ্ভুত মায়াবী লাগছিল, খুব আফশোস হল ক্যামেরা আনতে দেয়নি বলে, কিন্তু বেশি সময় পেলাম না দুক্ষু করার এক মিনিটেই পৌঁছে গেলাম সাউথ গেটের সামনে। সেখানে চটি জুতো জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে প্রথমে পা ধোয়া, তারপরে ঢুকে পড়লাম মন্দিরের চত্বরে। চত্বরের দুপাশে নানান ছোট মন্দির আর থান, তারপর বেশ কয়েকটা সিঁড়ি উঠে আবার একটা প্রবেশদ্বার। সেটা দিয়ে ঢুকলেই মূল মন্দিরটা মাঝখানে আর চারপাশে অনেক অনেক ছোট ছোট মন্দির।

এক পাক দিলাম, একদিকে প্রদীপ আর মোমবাতি জ্বালানো হচ্ছে, তার পাশে প্রচুর মানুষ নিচে বসে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম, ধ্বজা পালটানো হচ্ছে। আবার বাইরের চত্বরে এসে বসলাম, কারন একটু দেরী হবে নাকি। এরই মাঝে একটু হই হল্লা হল, কয়েকজন খাঁকি পোষাক পরা লোক ছুটে এসে দুজন কে কলার চেপে ধরে নিয়ে গেল, শুনলাম, যাদের ধরেছে তারা নাকি বি এস এফ এর কর্মী, মন্দির দর্শন করতে এসে ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পরেছিল, তারপর বারন না মেনে জগন্নাথ এর স্নান করা দেখে ফেলেছে। কি অন্যায়! সুভদ্রার স্নান করাও যদি দেখে নিত?

আমি ভীষন মন দিয়ে ধ্বজা পালটানো দেখলে লাগলাম। মূল মন্দিরের গায়ে অসঙ্খ্য খাঁজ, তাতে পা দিয়ে দিয়ে চুড়ার খুব কাছে উঠে যাচ্ছে একজন, কিন্তু শেষে একটা মোটকা দশ ফুট উঁচু কুকির মতো বস্তু আছে, টায়ার এর মতন, সেখানে কোনো খাঁজ নেই। ভাবছিলাম কি করে পেরবে ওটা, তারপরে দেখলাম সেখানে দড়ির মই লাগানো, সেই ধরে লোকটি উঠে গেল ওপরে। একটু পরে কাজ শেষ হলে নেমে এলো একই ভাবে। কাজটায় প্রচুর অনুশীলন দরকার, এবং কখনো কোন দুর্ঘটনা যে ঘটেনি সেটা ভগবানেরই কৃপা, তবে কিষ্কিন্ধ্যা টাও উড়িষ্যাতেই হওয়ায় ট্রেনার পাওয়ার কোন অসুবিধে নেই। ট্রেনারদের অনেকেই লঙ্কায় মারা পড়েছে যুদ্ধে, কয়েকজনকে গুজরাট, বিহার ও উত্তর প্রদেশের মন্দিরে মোদীর স্বপক্ষে দাঁড়াতে হয়েছে হাতে গন্ধমাদন নিয়ে, কিন্তু এখানেও দেখলাম কম নেই। তারা চৌর্য বৃত্তিতেও বেশ পটু, তাই সাবধানেই রইলাম।

আটটা বেজে গেছে, বিরক্তি লাগছে এবারে। অবশেষে তিনি এলেন, আমাদের মূল পান্ডা। তাঁর নাম বলভদ্র শৃঙ্গারী। বছর চল্লিশের কমই হবে, প্রায় সাড়ে ছয় ফিট লম্বা, চওড়া মাননসই, চোখে পড়ার মতো ফরসা রং, সুন্দর কাটা কাটা নাক মুখ। পুরীতে গোটা দশেক বিল্ডিং কমপ্লেক্স হচ্ছে তাঁর টাকায়, তিন খানা কর্মচারী শুধু মন্দিরের কাস্টমার নিয়ে আসার জন্য। গলাটা জোরালো, মেজাজটা তার থেকেও বেশি। বুবুদা নিজের সতেরো বারের অভিজ্ঞতা থেকে সাহস নিয়ে একটু তাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছিল, উনি বকে দিলেন। ঠাকুরের কাজ ওরম ঘড়ি ধরে হয় না। দাঁড়ানোর ইচ্ছে না থাকলে পরের দিন সকালে আসতে হবে। বুবুদা দেখলাম তখনো নরম, তার মানে ভক্তি এখনো একটুও কমেনি। আমি ভাবলাম একটু গপ্প করা যাক।

বলভদ্র জানালেন তিনি উচ্চস্তরের পান্ডা। তাঁর পরিবার ও আরো একটি পরিবারেরই শুধু ঠাকুরকে স্নান করানোর ও সাজানোর অধিকার আছে তাঁর পদবীও তাই শৃঙ্গারী। আমি ভাবছিলাম বলি স্পারটাকাসে দেখেছি, ওগুলো রানীর দাসিরা করে আর মাঝে মাঝে রাজা এসে তাদের ওপরে কি সব এক্সপেরিমেন্ট করে পেছন দিক থেকে, এখানে জগন্নাথ বা বলরাম ওনার ওপরেও তাই করে কি? বাড়াবাড়ি হবে, তাই চেপে গেলাম। রান্নাঘরের খোঁজ নিলাম একটু উনি বললেন আজকে রান্না খতম, আবার কালকে হবে। শেষে একদম কিছু পয়েন্ট না পেয়ে বোকা বোকা মুখ করে জিজ্ঞেস করলাম, এই যে ধ্বজা লাগাতে একজন মন্দিরের গায়ে পা দিয়ে উঠছে, এতে ওনারা উষ্মা প্রকাশ করেন না? উনি এই প্রথম হাসলেন, বোকা বাঙ্গালীর কথা শুনে, তারপর বললেন জৌণ বানাইথিলা, সেও তো পাদো দিয়কিরি উঠিথিলা, না কৌণ? তারপরে আরেকটু প্রাঞ্জল করার জন্যে জানালেন, উনি যখন স্নান করান, তখনো তো ঠাকুরের গোপন অঙ্গে হাত লাগাতে হয়, তাতে কি পাপ হয়? মনে পাপ না থাকলেই হল। ঠাকুর রাগ করেন না। নেড়ে দে মনে পড়তেই পাপী মন বলছিল ঠাকুরের তো খুশি হওয়ার কথা, পাপ কে চাপ দিলাম যাতে এসব কথা মনে না আসে, আমি তীর্থ করতে এসেছে, রঙ্গরসিকতা করতে নয়। ফিলসফিটা সম্যক বুঝলাম, সঙ্গে বুঝলাম সেই বিএসএফ ছেলে দুটি কি সাংঘাতিক অন্যায় করেছে। 

পৌনে দশটা বাজে, আমি টোকেন টা বুবুদার হাতে দিয়ে খালি পায়েই হোটেলে ফেরত যাব ভাবছি, বুবুদা মেঘাই আর বুবাই কে নিয়ে পাথর পাথর খেলছে মানে এই খেলায় বলতে হবে সামনের পাঁচিল অবধি কটা পাথর পাতা, তারপর গুনে আসতে হবে প্রত্যেকটায় পা ফেলে, পাশে বসে একটা দিল্লিবাসী গুজ্জু পরিবার নিতান্ত বেসুরে কি একটা ভজন গাইছে আর তাদের পান্ডা বাঁদর তাড়াচ্ছে, মন্দির প্রায় ফাঁকা, এমন সময়ে ডাক পড়লো। মূল মন্দিরে ঢুকতে যাচ্ছি, একজন গেরুয়া পরা বছর পনেরোর ছেলে ভিক্ষা চাইলো, আমি যথারীতি দিলাম না। একজন টাকমাথা পান্ডা জানতে চাইলেন ভি আই পি দরশনও? তারপর বলভদ্র বাবুকে দেখে রাস্তা ছেড়ে দিলেন। আমরা গর্ভগৃহে ঢুকলাম। বলভদ্র বাবুর পেছন পেছন। মৌনী সেজে।

গর্ভগৃহ খানা অনেক মন্দিরের তুলনায় বেশ বড়। কিন্তু তার দেওয়াল, প্রদীপের কারনেই হয়তো, কালো। সেখানে বাল্ব জ্বলছে, টিউবও, কিন্ত তাতেও বেশ অন্ধকার অন্ধকার ব্যাপার। মেঝে জলে আর দুধে ভর্তি হয়তো স্নান করানো হয়েছে কিছু আগে, তাই। সামনে মস্ত দুই কাঠের মূর্তি ফুট দশ বারো হবে, বাঁয়ে জগন্নাথ, ডাইনে বলরাম। মাঝে সুভদ্রা, সে সামান্য ছোট। দুই ভাইয়ের হাত আছে, সামনে প্রসারিত, তাতে আঙ্গুল নেই। সুভদ্রার হাত চোখে পড়লো না। মূর্তি গুলি একখান ফুট চার উঁচু বেদির ওপরে বসানো, তার প্রত্যেক জনের সামনেই বসে আছেন একজন করে পান্ডা। কেউ প্রণাম করলেই মুখস্তের মতন বলে যাচ্ছেন প্রনামি দিয়, না দিয়ে জিও নি আবার কম দিলে বকাও দিচ্ছেন। বলভদ্র আমাদের বাঁ দিকের কোনায় দাঁড় করিয়ে মন্ত্র পাঠ করালেন তারপর বললেন পরিক্রমা করে নিতে। পরিক্রমা করতে ঢুকলাম বাঁ দিক দিয়ে - ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানেও একজন পান্ডা আছেন, প্রনামী না দেওয়ায় বাপান্ত করলেন আমার, কিন্তু আমি তো মৌনী, তাই বেশিক্ষন গাল পাড়লেন না। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, পরিক্রমা করতে গিয়ে একঝলক মনে হল যেন ক্যাওড়াতলার ইলেক্ট্রিক চুল্লির পেছনে অস্থি নিতে গেছি একটা অদ্ভুত অস্বস্তি, একটা অদ্ভুত গুম ধরা হাওয়া সেখানে। যখন বেরচ্ছি, একজন পান্ডা মাথায় লাঠির হাল্কা বাড়ী মেরে প্রনামী চাইলেন, না দেওয়ায় যা ভাষায় অভিশাপ দিলেন, বুঝলাম এই জীবনে দ্বিতীয় বার পিতা হওয়ার চান্স কমে গেলো, হোটেলে ফিরে দেখতে হবে কিছু আছে নাকি সবই গেলো। বুবুদা প্যাকেজে পুজোও দিল, আমি মর‍্যালি সেটা শেয়ার করলাম, যথার্থ বঙ্গসন্তানের মতো।

পরের দিন সকালে উঠেই কোনার্ক গেছলাম, সঙ্গে চন্দ্রভাগা বিচ। সেখানে নতুন কিছু দেখিনি, বরং দেখলাম গত পাঁচ বছরে আরো ভেঙ্গে গেছে মন্দির। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটা খুব সুন্দর ছেলের সঙ্গে আলাপ হলো, তার নাম পরশ। আফ্রিকান ফিচার, কৃষ্ণবর্ণ, কোঁচকানো চুল, কিন্তু সবথেকে দেখার মতো তার চোখ যেন কথা বলে। সে কাছেই থাকে, একখানা মুদিখানায় চাকরি করে, মালিকে সঙ্গে এসেছে, বাইকে চেপে, সঙ্গে যাবে কিছু একটা হাতে ধরে নিয়ে। কথা বলে অদ্ভুত ভালো লাগলো। তার একটা ছবি তুলে জানতে চাইলাম কি রে, তোর অন্য ছবির থেকে এটা ভালো লাগলো? পরশ বলল আজকেই তার প্রথম ছবি তলা হলো। কিন্তু কোনো দুঃখ নেই তার জন্য, সব সময়ে হাসি খুশী। এরকম মানুষের জন্যেই বোধহয় আমাদের বেঁচে থাকা।

আরেকটা হল মন্দিরের ভেতরে। এক উৎকল গ্রাম্য ঠাকুমা একটা অদ্ভুত পোজে দাঁড়িয়ে পশ্চাদদেশে অঙ্গুলি হেলন করছিলেন, আমি ছবি তুলবো, এমন সময় সুপর্ণা কোথা থেকে উদয় হয়ে বলল কি গো তুমি নামবে না নিচে? ওমনি আঙ্গুল সরে গেল, আমি মনে মনে খুব হতাশ হলেও মুখে একটু হেসে বললাম যাও, যাচ্ছি, ঠাকুমার একটু ছবি তুলি। যাচ্ছি তারপর। ওদের সঙ্গেই ছিলাম কিছুক্ষন। একটু পরেই পার্ট অফ দ্য পার্টি হয়ে গেলাম, ওরা ভুলে গেলো আমি ওদের লোক নই। ঠাকুমার ছেলে আধ খাওয়া বেলে পাথর দেখিয়ে শেষে রায় দিল যে সব পাথরই উই লেগে এই অবস্থা। তার বউ একবার মিউ মিউ করে বলছিল যে পাথরে উই হয় না, ভদ্রলোক গর্জন করে উঠলেন দেখছিস না, মাঝে হলদে হয়ে আছে? এর পরে সত্যিই আর কোন কথা হয়না, আমরা তাই সব্বাই মেনে নিলাম। আমার দিকে জিজ্ঞ্যাসু দৃষ্টিতে ভদ্রলক তাকিয়েছিলেন ফর সাপোর্ট, আমি সাপোর্ট দিয়ে মাথা নাড়লাম। মাঝে হলদে আমিও দেখেছি। ঊনি দ্বিগুন উৎসাহে আরো অনেক কিছু বোঝাতে শুরু করলেন আমার উড়িয়া জ্ঞান সীমিত, বুঝতে তাই সময় লাগছিল, কারন ওনারা গ্রাম এর লোক। আরো একটু থাকতাম, মনি মুক্তা ভালই পাচ্ছিলাম, কিন্তু পাথর তেতে উঠেছে ততক্ষণে, তাই আর থাকা গেল না, নেমে এসে রওনা দিলাম পুরীর দিকে।

আর কোথাও যাইনি, আর কিছু করিনি। বিকেলে-সন্ধ্যায় বিচে বসা, সে নতুন কিছ নয়। কটকী শাড়ি কেনা সেও নতুন কুছ নেহি, কলকাতাতেও ওরকম কতো কিনতে হয়। পরের দিন দশটায় বেরিয়ে পড়লাম আবার, কলকাতার দিকে।

দু খানা জিনিস না জানালে অবশ্য অন্যায় হবে পাঠকদের প্রতি। একটা হল ফেরার আগের দিন সন্ধ্যায়। বিচে চায়ের অর্ডার দিয়ে চেয়ারে বসেছি, পয়সা দেওয়ার সময় বুঝলাম চায়ের পয়সায় চেয়ার ধরা নেই, ওটা আলাদা, দশ টাকা, কিন্তু একবার উঠে গেলেই টেনিওর শেষ, পরের বার বসলেই আবার দশ। বউ ও বউদি একটু পরে শপিং করতে চলে গেল, বুবুদা আমাদের দুই বড় বাচ্চাদের নিয়ে উটের পিঠে চাপাতে গেল, আমি বসে বসে চেয়ারের পয়সা উশুল করছিলাম। কিন্তু বড্ড মশা। এতোই বেশী যে এক ভদ্রমহিলা পায়ের মশা মারতে গিয়ে উল্টে পড়লেন চেয়ার সমেত, আর ওমনি হূলুস্থুল বেধে গেল। আমি দেখলাম শান্তি নেই, তাই উঠে পড়ে বিচের দোকান গুলোর মধ্যে একটু হাঁটাহাঁটি করছি, এমন সময় এক মস্ত লম্বা ভদ্রলোক কোলে বাচ্চা নিয়ে আমার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন এটা কত এক্স জুম? তর্জনীটা আমার গলায় ঝোলা ক্যামেরার দিকে। আমি একটু গম্ভীর হাসি দিয়ে বললাম এটা তো ডি এস এল আর, এতে এক্সে মাপ হয় না, এখানে ওয়াই তে হয় তা এটা থার্টিফাইভ ওয়াই। ওনার চোখে একটা বিদ্যুৎ চমকের মতো দেখা গেল যেন আবার আঙ্গুল তুলে বল্লেন একজ্যাক্টলি! বাঃ! দারুন জিনিস! তারপর পকেট থেকে ফোন বার করে কাকে ফোন করতে করতে চলে গেলেন।


শেষ ঘটনা টা ট্রেনে। নীলাচল এক্সপ্রেসে খড়গপুর এসে ট্রেন পাল্টাতে হবে। একটা সাইড লোয়ারে ঘুমোনোর তাল করছি এইলের দিকে পেছন ফিরে, হঠাৎ পিঠে একটা বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় পড়লো। পেছন ফিরে দেখি একজন হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকাতেই হাসি টা উবে গেলো, বলল সোচা থা দোস্ত হ্যায়। কোন দুঃখ প্রকাশ নেই, কোনো লজ্জা নেই, বলে দিয়েছে কি ভেবেছিল, অতএব আমার পিঠের দায়িত্ব তার নেই এখন। যেই পেছন ফিরেছে, আমি তার পেছনটা দেখলাম বেশ হাতের কাছে জমিয়ে একটা চাপড় দিলাম। ছেলেটি ঘুরে তাকিয়েছে, থতমত আমি এক গাল হেসে বললাম মুঝে ভি লাগা দোস্ত হ্যায়। চলিয়ে, কোই বাত নেহি। আমি খড়গপুরে নেমে গেলাম, ছেলেটি তখনো আমাকে উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখছে।