Wednesday, April 15, 2015

দুই মাসে তিন পার্বণ (প্রথম পার্বণ)



সংস্কৃতি মনা বাঙ্গালীর কাছে বোশেখ-জ্যোষ্ঠির মতো মাস হয় না। ইভেন্টএ ঠাসা এই দুটো মাসে গরম কে ভুলে থাকার ও ভুলিয়ে রাখার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো কালচারএর মধ্যে ডুবে যাওয়া, এমন গভীরে, যে লোডশেডিং হলেও ধুর শালাবলার বদলে আলো আমার আলোগাইতে ইচ্ছে হবে।
সুযোগ ও মন্দ নেই মাসের প্রথম দিনটাই বছরের প্রথম দিন, তাই শুভস্য শীঘ্রম, শীঘ্রতর, শীঘ্রতম।

নববর্ষের শুভেচ্ছা (প্রথম পার্বণ)

আগে বছরের প্রথম দিনে নতুন জামা পরে বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার যে রীতি ছিলো তা এই মনস্কামনায় যে বছরের বাকি দিন গুলোও যেন ভাল মন্দ মিশিয়েও ভালোর দিকেই যায় বেশী। বছরের প্রথম দিন টা এখনো আছে, ট্রেনের শেষ কামরার মতো, প্রণাম আর আশীর্বাদ ও আছে, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কে খুঁজে নিতে হয় এখন।

এই যে অপদার্থ ইংরেজ গুলো, ব্যাটারা যাওয়ার সময় ওদের ভাষাটার টুক্রো টাক্রা কুড়িয়ে নিয়ে যেতে ভুলে গেলো, তাতেই তো হল যত্তো মুশকিল! যতদিন ওরা ছিল, “ইয়েস, নো, ভেরি গুডএর বাইরে আমরা জানতাম, কারুর সঙ্গে দেখা হলে ইংরেজি তে বলতে হয় হ্যাল্লো, হাউ ডু ইউ ডু?” আর কেউ থ্যাঙ্ক ইউবললে নিয়ম হচ্ছে বলা মেনশান নট। নীরদচন্দ্র বলে এক বাঙ্গালী বিলেতে থেকে ইংরেজি ভাষার ষষ্ঠী পুজো করছিলেন বটে সেই সময়েও, কিন্তু সে সময় ওনাকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি বিশেষ। এমতাবস্থায় কি করা?

নেতাজী হারিয়ে যাওয়ায় কংগ্রেসের প্রতি রাগ টা কেমন কমে আসছিলো, শ্যামা বাবুও চলে গেলেন, পূর্বপাকিস্তানের মানুষের সাথে ভাইচারা দেখিয়ে কিঞ্চিৎ ক্ষিদেয় কাতর হলাম কিছুদিন, শেষে কিছু না পেয়ে আমরা আমাদের প্রগতীশীল শাড়ি কে ভুলে ওই বুক-পেট এক করা মাও স্যুট এর প্রতি প্রনয় জানালাম - আর সেই মাও ৎসে তুং এর কাছ থেকে জানলাম যে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা বলে একটা দেশ আছে, যদিও ওরা বেশির ভাগই সাহেব এবং সাদা চামড়া, তাদের হাত নিঃসন্দেহে কালো, লোমশ, নিকষ কালো, এবং তারা সেই হাত বাড়িয়ে দিলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়াই নিয়ম।

হামান দিস্তায় কেমন জোর ছিলো, হাত গুঁড়োনো গেছে কিনা এসব বলা মুশকিল, কিন্তু এর মাঝেই আমরা ইংরেজি অভিধানকে অনেক দানে সমৃদ্ধ করে ফেলেছি যেমন ঘেরাও, লাঠিচার্জ, বন্ধ, ধর্না ইত্যাদি ইংরেজি অভিধানের এই নতুন শব্দগুলো আমাদেরই দান। আমেরিকার কালো হাত ধরে আমরা শিখেও নিয়েছি যে হ্যালোরবদলে হাইবললে অনেক সুন্দর শোনায়, কেউ থ্যাঙ্ক ইউবললে উত্তরে তাকে ওয়েলকামজানানো টাই রীতি। সুন্দরের আহ্বানে লম্বা করে শুভ নববর্ষ বলাও ভুলে গিয়ে ছোট্ট করে হ্যাপি পয়লা বৈশাখ বলা শুরু করে দিয়েছি কখন যেন। বেশ মডার্ন শোনাচ্ছে না ব্যাপারটা?
বলার মাধ্যমও পাল্টে গেছে। আগে শুভেচ্ছা, প্রণাম আর ভালোবাসা বিনিময় হতো হয় মুখোমুখি, কিম্বা পত্রালাপে। ধরুন আপনার মামা থাকেন দিল্লিতে, তাঁকে নববর্ষের প্রণাম জানিয়ে চিঠি লিখতেন, সে চিঠি তিনি হাতে পেতেন রবীন্দ্র জয়ন্তী নাগাদ, কিন্ত তাতে কোনো ক্ষতি যে হতো, তা নয় তিনিও চিঠি পাবেন এই ভরসায় আগাম আশীর্বাদ জানিয়ে চিঠি লিখে দিতেন। বরং তাতে নববর্ষ নববর্ষ ভাব টা আরো বেশ কিছুদিন থাকতো।

ফোন আসায় আরো একটু ভালো হল একটু অন্যরকম ভালোএকদম হাতে গরম দিনের দিন প্রণাম ও জানানো হয়ে গেলো, আবার সঙ্গে সঙ্গে আশীর্বাদ টাও হাতিয়ে নেওয়া গেলো চিঠির জন্যে হা-পিত্যেস করে বসে থাকার ব্যাপার নেই। বরং চিঠিতে অনেক কথা লিখতে গেলে অনেক সময় লাগে, পোস্টাপিসে যেতে হয়, লাইন দিয়ে পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড লেটার, খাম, ডাকটিকিট এসব কিনতে হয়। তার বদলে কি সুন্দর সব কথা বলা হয়ে গেলো, পয়সা একটু বেশী গেলো, কিন্তু তা যাক, কাজ টা তো আরো ভালো, আরো সুষ্ঠ করে হয়ে যায়, না কি? একদম ম্যাগীর টু মিনিট ন্যুডল্সের মতো।

শ্যাম পিত্রোদার কল্যাণে সেলফোন আসার পরে দেখা গেলো টেক্সট মেসেজে কাজ একই হয়, কিন্তু খরচা আরো কম। অতএব, বাঙ্গালীর এক কথা কথা কম, টাইপ বেশী। ভোর থেকে শ্যামের বাঁশী চালু প্রতি দু মিনিটে একবার করে ট্যাঁক ট্যাঁক করে উঠবে যন্ত্র কিন্তু বাংলায় টাইপ টা তখনো করা যেতো না সেলফোনে তাই সেই সবেধন নীলমণি ইংরেজিই ভরসা। যাকে পাঠিয়েছেন, তিনি প্রাতঃকৃত্য সেরে এসে নাকে চশমা তুলে দেখলেন মোট বত্রিশ খানা মেসেজ, বত্রিশ জন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে যাদের মধ্যে অন্ততঃ তিন জন আছে, যারা আছে বলেই ওনার মনে ছিল না। সবারই মোটামুটি এক কথা - উইশ উই এ ভেরি হ্যাপি পাইলা বাইসাখ স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা। এক টাকার মেসেজে পয়লা বৈশাখ এর দায়িত্ব উদ্ধার, একদম পুরো পরিবারের সবার জন্য, অর্থাৎ পার হেড চার আনা। যাকে পাঠালেন, সে পড়লে পড়লো, না পড়লে আপনার দায় নেই। আর আতাক্যালানে ভদ্রলোক হ্যাপি পাইলা বাই সাখপড়ে যদি ভাবেন আপনি বাঙাল ভাষায় জানতে চেয়েছেন শাক কিনে খুশি হয়েছে কিনা, তার ভার ও আপনার নয় বাড়িতে নিশ্চয়ই টেক স্যাভি ছেলে মেয়ে আছে, সে বুঝিয়ে দেবে। মোট কথা, এই একবিংশ শতাব্দী তেও এক টাকায় বড় কাজ টা হয়ে গেলো কিনা? উত্তর উনি দিতেই পারেন, দিলে ওনার পয়সা যাবে, তাই সে মাথাব্যাথার থেকেও আপনার রেহাই।

অনেকে মেসেজেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন এর মধ্যে, কিন্তু খর্চায় পোষাচ্ছিল না ঠিক। এক টাকা বাঁচানোর ও রাস্তা পাওয়া গেলো তখন তার নাম হোয়াটস অ্যাপ আর ফেসবুক মেসেঞ্জার সেই মার্কিনী কালো হাত ধরেই এলো। একটাই মেসেজ, বাংলায় ও টাইপ করতে পারবেন কারন অ্যান্ড্রয়েডের কল্যাণে এখন বাংলায় টাইপ করা যায় - এক সঙ্গে দুশোবাহান্ন জন কে পাঠালেও সেই একই ডেটা চার্জ। দশ পয়সায় হয়ে যাবে।

এবারে আপনার যদি এই দুশোবাহান্ন জনের নাম টাইপ করতে ভালো না লাগে, তাহলে আরো সহজ উপায় আছে। ফেসবুকে শুধু একটা স্ট্যাটাস টাইপ করে দিন। অবাঙ্গালি বন্ধুদের ও জানাতে চান আজকে আপনার নববর্ষ? তাহলে বাংলায় লিখে ইংরেজি হরফে টাইপ করে দিন – “সুভো নাবা বারশা উইশ ইউ অ্যা ভেরি হ্যাপি বেঙ্গালি নিউ ইয়ার। অনেক ওয়েবসাইটে ফ্রি তে ছবি পাওয়া যায়, তার একটা পছন্দ করে ঝেড়ে দিন, লেখার সঙ্গে পোস্ট করে দিন। এতে ফোন ও লাগে না অফিসের ইন্টারনেট ব্যবহার করে একদম ফোকটে পাঠিয়ে দিন। হয়ে গেলো নববর্ষের ভালোবাসার দান-প্রতিদান। একশো বছরে নববর্ষের এই টুকু বিবর্তন কি কাম্য নয়?

প্রত্যেক জাতিনিষ্ঠ বাঙ্গালী তাই এখন সকালে উঠেই, কিম্বা কেউ কেউ আগের দিন অফিস থেকে কিম্বা রাতে বাথরুম যাওয়ার সময়, একটা কাজ অতি অবশ্যই করে সেটা হলো ফেসবুকে একটা পোস্ট করা শুভা নাবা বারসা। তারপর সারাদিন কি করে? সে গল্প এর পর।

ভোজনম্ শরণম্

ছাগলদের কোনো জ্যোতিষী নেই। থাকলেও তার আয় তেমন হতো না, কারন ছাগলের ভবিষ্যৎ গণনা করা খুব সহজ, যে কেউ করতে পারে। প্রথম দুই সন্তানের জন্যে দুগ্ধ প্রাপ্তি তে অগ্রাধিকার, তৃতীয় থেকে খুঁজে খেতে হবে, শক্তিশালী দুই ভাই-বোনের খাওয়া শেষ হলে সেই ফাঁকে কারন দুগ্ধপথ মাত্র দুটো। ঘাস পাতা খাওয়া শুরু করলে বঞ্চনার থেকে মুক্তি। অতঃপর গৃহস্তের ডান্ডায় প্রহার, কচি লাউডাঁটা খেয়ে ফেলার অপরাধে। নারী হলে প্রতি বছর মাতৃত্ব প্রাপ্তি। পুরুষ হলে বেশীরভাগের খুব অল্পবয়সে পুরুষত্ব নাস্তি, প্রতি দশে নয়জনের তাই, এবং ভরন্ত যৌবনে পঞ্চত্ব প্রাপ্তি। দশের মধ্যে চার জনের রবিবারে, বাকি চার উৎসবে, এবং বাকি দুই অন্য দিনে, তবে সবাই মুলতঃ উষাকালে।

বেঁচে থাকার সবথেকে বড় জ্বালাতন হল সব সময়ে মরে যাব, মরে যাববলে ভয় পেতে হয়। ছেলেদের চোট পেতে হয়, একটু বড় হয়ে হাফ সোল খেতে হয়, বিয়ে করে গুটিকতক সাবসিডাইসড বাচ্চা পয়দা করে বড় করতে হয়, চাকরী করতে হয়, ইয়েস স্যার করতে হয়, রিটায়ার করতে হয়, বুড়ো বয়সে প্যান্টে হিসু করে ফেলতে হয়, প্রস্টেটের সাইজ নিয়ে চিন্তা করতে হয়, আর আসে পাশে কেউ পটল তুললেই সেই ভয় মরে যাবো নাকি? পাঁঠা দের এর কোনোটাই করতে হয় না জন্মাও, চাচার হাতে খাসি হয়ে দিন দুয়েক চেঁচাও, তারপর চাচার বৌয়ের দেওয়া দানা খেয়ে পুরুষ্ট হও, আর কদিন পরে ম্যাহ্যা করে একটা ডাক দিয়ে ভোরবেলায় ফুটুস হয়ে যাও। দেশে যখন দুর্ভিক্ষ হয়, মানুষ তখন সরকারি অনুদানে সমৃদ্ধ রেশন এর চাল, ডাল তেল কেনে, রৌদ্রের মধ্যেও, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। নববর্ষের দিন ভোর বেলায় বেরোলে অনেকের ভুল ধারনা হতে পারে যে দুর্ভিক্ষ ফের এসেছে কারন বাজারে লম্বা লম্বা লাইন। তার মধ্যে সবথেকে বড় লাইন টা অতি অবশ্যই মাংসের দোকানের। এই এক যায়গায় কিন্তু উর্দুর চল খুব রাং, সিনা, গর্দান, চাঁপ, কলিজা, দিল... এবং সেখানেও বাছাবাছি – “চাচা, বাচ্চা খাবে, খাসি দেবে না, খুব চর্বি হয়, পাঁঠা দাও, হাড় একদম হয় না যেন, না না, চর্বি দেবে না, হার্টের জন্য খুব খারাপ, এই জন্যেই তো রেড মিট ছেড়েই দিয়েছি প্রায় আজকে নেহাৎ বচ্ছরকার দিন, তাই এলাম, না হলে এই গরমে কেউ বড় মাংস খায় নাকি?” যিনি বলছেন, তাঁর বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ প্রতি রোববার ওই লাইনে ওনাকে দেখা যায়, তা সে যতই গরম হোক, আর তাঁর নিজের বাচ্চা হাড় চিবিয়ে পাউডার করে দিতে পারে তিন মিনিটে, কিন্তু নিজে খাবেন না অথবা স্ত্রী বকবে বলে অকারনে কিছু মিছে কথা বলে ফেললেন। আরো খানিক বাকবিতন্ডা চল্লো সাদা চর্বি টা আসলে চর্বি না রেওয়াজি। মেটে বেশী হলেও খারাপ, কম হলেও খারাপ। অন্য পাঁঠার মাংস ঢুকে গেলে ভেজাল। বাছা বাছিতে বিরক্ত হয়ে চাচা গোল মতো এক খানা নিটোল মাংস দিতে যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক হাঁ হাঁ করে উঠলেন ওকি, ওকি, ওসব কি দিচ্ছো? ওসব আমরা খাই না, ওটা বাদ দাও, বাদ দাও। চাচা জানতে চাইলেন আপনি না খাবেন তো কৌন খাবে? ইয়ে তো সবসে নরম গোস্ত আছে?” সঙ্গে সঙ্গে একটু রসিকতাও হয়ে গেলো – “আমাদের লাগে না, তোমাদের তো অনেক বাচ্চা হতে হয়, তোমার লাগবে, বাড়ী নিয়ে যাও” – এই বলে খানিক হ্যা হ্যা করে হাসি। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটি তার বাবার আঙ্গুল নেড়ে জিজ্ঞ্যেস করলো বাবা, ওটা কি দিচ্ছিল চাচাদাদু? বাবা মুচকি হাসি মুছে নিয়ে তৎক্ষনাৎ খেঁকিয়ে উঠলেন এই জন্যেই তোকে বাজারে আনতে চাই না। সব কিছু নিয়ে কথা! চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো একদম! ওই দেখো, বেড়াল, দেখো, কেমন খেলছে!এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস নিয়ে মাঝবয়সী ভদ্রলোক পাঁঠার মাংস নিয়ে বাড়ী ফিরলেন স্ত্রী বললেন এটা কি দিয়েছে গো? খারাপ কিছু নয় তো?” ভদ্রলোক আড় চোখে দেখে নিয়ে বললেন মেটে!স্ত্রী রেগে গেলেন আমি মেটে চিনি না?” ভদ্রলোক শান্তনা দিলেন – “না, না, ওসব বাদ দিয়ে দিয়েছি, ঝগড়াও করেছি দিয়ে দিচ্ছিল বলে, এটা দিল, কিম্বা গুর্দা হবে, ভালো জিনিস দেখো না নাকি কাগজে, কিডনি কত্তো টাকায় বিক্কিরি হয়। স্ত্রী ও খুশী হয়ে চলে গেলেন যে খারাপ জিনিস দেয়নি যেন খারাপ জিনিসখেলে বেস্টিয়ালিটির দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যেত।

শুধু যে মাংস এসেছে, তা নয়। চিংড়িও এসেছে। আগে হলে ইলিশ আসতো। কিন্তু একে ফারাক্কা বানিয়ে গঙ্গার জল দিই না, তার পরে আবার আউট হওয়া রোহিত শর্মা চোট্টা আম্পায়ার এর কল্যাণে সেঞ্চুরী বানিয়ে বাংলাদেশের হাতের গোড়া থেকে বিশ্বকাপ টা হড়কে দিয়েছে, তাই রেডিও মুন্নার প্রচারে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ আর আমাদের ইলিশ দেয় না। এদিকে ইলিশ তেমন ওঠে না, চোরা পথে ওপার থেকেই কিছু আসে, সেই ইলিশ কিনতে গেলে অনেককেই কিডনি বিক্রি করতে হতে পারে, তাই ইলিশ বাড়ী আসে না আর। চিতল আসতো, কিন্ত উঠছে না দিন কয়েক। তাই চিংড়িই ভরসা। মন্দ কি? প্রথমে বাদাম দেওয়া কুড়কুড়ে আলুভাজার সঙ্গে একটু চাপ চাপ মুগের ডাল দিয়ে সাদা, ভাত, তার পরে সুক্তো। পাকা রুই দিয়ে দই রুই ও আছে। এরপর প্রচুর পরিমানে কাজু কিসমিস দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের পোলাও, সঙ্গে চিংড়ি আর কচি পাঁঠার কষা মাংস, শেষ পাতে রামকৃষ্ণ স্যুইটসের দই আর রাজভোগ। এই না হলে পয়লা বৈশাখ? কে না জানে, কবিগুরু যে লিখে গেছেন এসো হে বৈশাখ এসো এসো সে তো এই খাবারের জন্যেই!

রাতের খাবার অবশ্য হোটেল থেকে আসে, কারন স্ত্রী রাতে রান্না করতে নারাজ। অনেকে ছাই পাঁশ খান সন্ধ্যেয়, তাতেও অনেক স্ন্যক্স আসে, তাই কারো কারো রাতের খাওয়া বন্ধও থাকে অনেক সময়ে। সকালেও একটু বেশী হয়ে গেছে, তারপরে এই সব স্ন্যাক্সেও অনেক ক্যালোরি কিনা, তাই। রাতে শোয়ার আগে হাফ মাতাল বাঙ্গালী ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে ঘেমো বগলের কথা ভুলে গান ধরে বহুযুগের ওপাড় হতে আষার এলো আমাড় মনে। সারাদিন যে সংস্কৃতির ছোঁয়া তাকে ছুঁয়ে গেছে, তার শেষ রেশ হিসেবে।
সংস্ কৃতির কথা পরের বার।




Friday, April 10, 2015

বসন্ত গেলো ব’লে

বসন্ত গেলো ব’লে

নিউ টাউনের ন্যাড়া রাস্তার ধারে পচা রোদের খপ্পর থেকে বাঁচবার জন্য দোকানের ভেতরে দাঁড়িয়ে চোখ কুঁচকে সচীনদার আদা-লিকার দিয়ে সিগারেট খাচ্ছি আর ভাবছি আজকেও একটু বৃষ্টি হলে বেড়ে হতো, সামনে দিয়ে একটা অটো চলে গেলো, একদম স্লো মোশানে। একটু দুরেই প্রভূত পরিমানে ব দিয়ে লেখা হোর্ডিং দিয়ে সাজানো ব্বিশ্ব ব্বাংলা সরনী, সেখান দিয়ে সাঁই সাঁই করে এয়ারপোর্ট চলে যাচ্ছে অসংখ্য গাড়ী, এমন মডার্ন যায়গায় স্লো মোশানে অটো? এটা খুবই অবাক ব্যাপার না? ভাঁড়ের যেমন হ্যান্ডেল হয় না, মাদুলির ব্র্যান্ড হয় না, পাঁচালীর অথার হয় না, চিনে জিনিসের গ্যারেন্টি হয়না কিম্বা জেমস বন্ডের বউ হয়না, ঠিক তেমনই অটোরও স্লো মোশান হয়না। অটোকে আস্তে চালালে বাবা বিশশোকম্মার অসম্মান হয়, পৌরুষে টান পড়ে, রাস্তার সমস্ত মারুতি, পাইভেট, ট্যাস্কি আর সমু গাড়িকে অযাচিত সন্মান দেওয়া হয় আর হোল ডে তেও মাইনে করা যায় না, তা সে যতই বাজার ভালো হোক। তাই অটো জোরেই চলে। এমনকি অটোর জোরে চলা এখন একটা মানদন্ড – একবার এক সাহসী অ্যাম্বাস্যাডার চালক আমাদের অটোকে ওভারটেক করে ফেলেছিলেন বলে আমাদের অটোচালক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেছিলেন “এ ডাইভার সিওর আগে অটো চালাতো” – এমনই সুনাম অটোর স্পিডের।

কিন্তু সেই গর্ব, সেই সুনামে চুনকালি মাখিয়ে এই অটো সত্যিই আস্তে চলছে। এতোটাই, যে বাঁ দিকের উনুনের উপরে ঝুঁকে থাকা সচীনদার সিড়িঙ্গে বউ আর ডান দিকে আদিরসের আধা স্বাদের লোভে দোকান “করতে” আসা সচীনদার সবে ম্যাট্টীক  পাস করা মেয়ে, এদের দুয়ের মাঝ দিয়ে ঝাড়া এক মিনিট দেখা গেলো অটোটাকে। তিন দিকে কেরোসিন কাঠের সরু ফ্রেম এর ওপরে লাগানো ফ্লেক্স, মাথায় মাইক। ফ্লেক্স গুলোতে খুব বড় করে ৮০% আর খুব ছোট করে “আপ টু” লেখা আছে, আর তার পাশে জামা, জুতো, ব্রা, জাঙ্গিয়া, নাইটি, প্রেশার কুকার, ইন্ডাকশন ওভেন, মোবাইল ফোন, গাড়ী ইত্যাদির মাঝে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন হাত কাটা ব্লাউস পরা লাস্যময়ি স্বাস্থ্যবতী মামনি, যেন ও দোকানে গিয়ে কিছু কিনলেই উনি আপনার গাল বা অন্য কিছু আলতো করে টিপে দিয়ে বলবেন “দুষ্টু!”, আর আপনার এক সপ্তাহের স্বপ্নের রসদ চলে আসবে তাতে।

অটোতে দুজন মানুষ। একজন ফুল প্যান্ট আর ডোরাকাটা বগল বের করা গেঞ্জি পরে চালকের আসনে, মাথায় একটা গামছা বাঁধা। পেছনে আরেকজন, ইনি হাফ হাতা টিশার্ট পরিহিত, নিম্নাঙ্গে জিন্স, পায়ে কিটোস, হাতে মাইক। সমানে বলে চলেছেন – “আর মাত্র পাঁজ দিন, একসিস মলে চলে আসুন চোইত্তো সেল এর মজা নিতে। সম্পুরনো এ সি মলের দ্বিতলে বাদশার সোরুমে। একানে আম্নি পাচ্চেন আপ্টু এইট্টি পারসেন ছারে, এই ডান্দিগ চেপে চালা না বাঁ, লেপ্টে সিকুটি হাত নারছে দেকছিস না নাকি বাঁ, ফালতু মা মাসি করবে, হ্যাঁ, আপ্টু এইট্টি পারসেন ছারে দামী ব্যান্ডের ব্রা, প্যান্টি, গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, নাইটি আর সমস্ত টাইপের ভেতোরের যামা। সনগে লাকি ড্র তে আম্নি পাচ্চেন একটি মারুতি গাড়ী, দশটি মোবাইল ও আরো অন্যান্য উপহার। আসুন আসুন আসুন!” বসন্ত গেলো বলে তাহলে? একলা বৈশাখের আর মাত্র পাঁজ দিন?
বাঙ্গালীর ভুল যায়গায় ঠিক জিনিস দেওয়াটা একটা বহু পুরোনো রোগ। এখানেও তার খামতি নেই। যে পাড়ায় এই প্রচার, সেখানে সচীনদা তার পরিবার নিয়ে থাকে বটে, ভোম্বলের মা বাবাও থাকে, কিন্তু তারা কি অ্যাক্সিস মলে যাবে? সচীনদার মেয়ের যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু সচীনদার স্টেটমেন্টের বোঝায় সে ইচ্ছে চাপা পড়ে গেছে – za বাপ সায়ের দোকান দেয়, তার মেয়েরে ওসব zaয়গায় zeতি নাই। ওদের পাড়ায় ইস্তেহার সাঁটা আছে মা তারা সুই-টস্ এর পাশের দেয়ালে - মল ও মুত্র যেখানে সেখানে ত্যাগ করবেন না, এতে পরিবেশ নষ্ট হয়, নিচে হিন্দিতে লেখা জাঁহা শোচ, ওয়াঁহা সৌচাল্যায়, পাশে বিদ্যা বালান। এটা তো সহজ কথা – যেখানে সেখানে হাগলে মুতলে তো ওই যে বিদ্দা পরীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে গ্যাল্মার নিয়ে, সে গন্দে টিক্তে না পেরে চলে যাবে, সে তো ঠিকই। তাই মলের সঙ্গে মলামেশাটা কেমনতরো, সে ওদের ভালই জানা আছে। কিন্তু সৌচালয়ে শোচ, ওই লাইনটা ভালো বোঝা যায় না, কারন সে ব্যারাম ওদের নেই, তাই। সে ব্যারাম আছে আপাতঃ উৎকৃষ্ট বাঙ্গালির – যাঁরা চেয়ারপ্রতীম কমোডে বসে চাপ দেন, তাঁদের, যদিও সেলফোনের উৎপাতে বাঙ্গালীর সৌচালয় শোচ আজ বিলুপ্তির পথে।

তাঁরা এপাড়ায় থাকেনও না। কিন্তু রোজ আসেন। কেউ গাড়ীতে ড্রাইভারের পেছনে কিম্বা পাশে বসে, কেউ নিজে চালিয়ে, কেউ বাইকে, কেউ বা অফিস বাসে, এমন কি কয়েক জন অটোতেও আসেন। এদের মধ্যে পুরুষেরা সকলেই প্যান্ট ও শার্ট পরেন, বেশীর ভাগই ব্র্যান্ডেড, পায়ে চামড়ার জুতো থাকে, আর শুক্রবারে জিন্স-টি-শার্ট এর সঙ্গে সাদা জুতো। মহিলারা কি কি পরেন সে বলা খুব লম্বা বলা হবে, কারন মহিলাদের যদিও সোমবার হয় শিবের পুজো করলে, মঙ্গলবার হয় মা সন্তোষীর ভক্ত হলে, এমনকি বেস্পতিবারও হয় মা লক্ষ্মীর কৃপা চাইলে, শুক্রবারটা ওঁদের মোটেই আলাদা নয়, তাই পোষাক পরিধানের নিরিখে ওঁদের সদাই শুক্রবার। এই কারনেই ওঁরা যা যা পান, তাই তাই পরেন, রোজ। এতে ঈর্ষা করার কিছু নেই, কারন শুক্রবারটা একটা বেশ ফ্রি ফ্রি দিন, তাই সেদিন অনেকে যে অনেক কিছু পরেনও না, একদম খোলামেলা থাকেন, সেও লক্ষ্য করলেই টের পাওয়া যায়। পুরুষদের কাছে এই ডিস্ক্রিমিনেশান যেমন কষ্টের, তেমনি সহজে দেখার আনন্দটাও যে অপরিসীম, তা বলাই বাহুল্য, তাই প্রতিবাদ টা করবো করবো করেও আর করা হয়ে ওঠে না। তা এই যে দু দল সেক্সুয়্যালি চরম ডিস্ক্রিমিনেটেড মানবদল, এঁদের মধ্যেও কিন্তু সমতা এনে দেওয়ার জন্য আমেরিকান কোম্পানী আবিষ্কার করেছে এক ইউনিভার্সাল লেভেলার। এনাদের সবাইকে, পুরুষ নারী সকলকে, গলায় ঝোলাতে হয় একখানা লকেট, নাহলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সে লকেটের নাম ব্যাজ, নীল-লাল-সাদা দড়ি দিয়ে ঝোলাতে হয়, যে যেমন রঙের পায় আরকি, সামনে ছবি আর নাম, পেছনে ম্যাগ্নেটিক স্ট্রিপ, যার ছোঁয়া দিয়ে দরজার কঠোর মনেও একটু চিড় ধরানো যায় প্রতিবার, সে লকেট দেখতে না পেলেই আধা ইংরেজি জানা সিকিওরিটি চেঁচিয়ে বলবে – প্রিজ ডিস্প্লে ইওর ব্যাজ স্যার! এখানে হিসি পেলে বাথ্রূমে যাবো বলাটা অসভ্যতা, বলতে হয় ওয়াশরুম, যদিও ওখানে গিয়ে সবাই যে ওয়াশ করেই বেরোন,  বিশেষতঃ ছোট কাজের পরে, এমন কোনো প্রমান নেই। এখানে ওপরে ওঠার জন্য লিফট নেই, আছে এলিভেটার। এখানে প্রত্যেকে অন্ততঃ চার বার করে বাইরে বেরোন প্রতিদিন, হাসিমুখে - কেউ ধুমপান করতে, কেউ চা খেতে, কেউ বা বন্ধুকে সঙ্গ দেবার জন্যেই শুধু, কিন্তু ফায়ার ড্রিলে বেরোতে হলেই মুখ ব্যাজার করতে হয়, কারন ওটাই নিয়ম। এখানে সমস্যা কে কেউ প্রব্লেম বলবে না, সবার কাছেই সমস্যা মানে চ্যালেঞ্জ। এখানে কল দিয়ে জল পড়ে না, শুধুই শব্দ হয়। তাই এখানে ইজের বা পিরান কি, সেটা তো কেউই জানেন না, এমনকি জনসমক্ষে ব্রা বা প্যান্টি বলাটাও অসভ্যতা। এখানে পেটির একটুও ঢাকতে অপারগ গেঁয়ো শায়ার নতুন নাম পেটি-কোট। এখানে সালোয়ার-কামিজের নতুন নাম স্যুট। এঁদের কাছে অন্তরবাস কে লঁজারি বলতে তেমন শোনা যায়না যদিও, লিঙ্গারি বললে এঁরা সবাই বুঝবেন, নিদেন পক্ষে আন্ডারওয়্যার। এনারা কেউ যাবেন কি? ওই বাদশা তে?
একটা সময় ছিলো, যখন বছরের এই সময়টায় একটা হাফ প্যান্ট আর একটা হাফ শার্ট (ফুল হলে চলবে না) একদম বাঁধা পাওনা ছিল। মায়ের ও একটা শাড়ি পাওনা হতো, কিন্তু মা সেটাকে তুলে রেখে দিতো, জষ্ঠি মাসের প্রথম মঙ্গলবারে সেটার উদবোধন হতো, ওটা পরে মা বিড় বিড় করে বলতো “সোনার মঙ্গলচন্ডী রুপোর থালা, কেন মা মঙ্গলচণ্ডী হল এতো বেলা, হাসতে, খেলতে, সোনার দোলায় দুলতে,  নির্ধনেরে ধন দিতে, রাজার মুখে পান দিতে, অপুত্রকে পুত্র দিতে, অন্ধরে চক্ষু দিতে, আইবুড়োর বিয়ে দিতে, অন্তকালে স্বর্গ পেতে কোরোনা হেলা, ঠারি ঠুরি পায়রাগুলি, ঠাকুর চল্লেন কৈলাসপুরী, যে বলে তার স্বর্গবাস, যে শোনে তার কৈলাস”। পয়লা বৈশাখে নতুন জামা পরতাম বটে, কিন্তু আর কিছু করতাম বলে মনে পড়ে না। বরং ওই জয়মঙ্গলবারে মা জেঠিমা প্রথমে ফল, তারপর বেগুনী আর বাদাম ভাজা দিয়ে মুড়ি খেতো, ওটা বেশি উত্তেজক ছিল। ছোট শহরের ছোট বাজারে সারা বছরই দরদামের চাপে একটু ডিস্কাউন্ট দিতেই হয় মুখচেনা খদ্দের কে, তাই চৈত্র সেল বলে বস্তুটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় কলকাতায় এসেই। হাতিবাগানের রাস্তায় প্রচুর হকার “সেল সেল সেল সেল, ফিফটি পঞ্চাশ, ফিফটি পঞ্চাশ” করে এক তালে চেঁচিয়ে বিক্রি করছে পাঞ্জাবি। এরকম চলছিল অনেকদিন। হাতিবাগান। এস্প্ল্যানেড। গড়িয়াহাট। তারপর দেখলাম গড়িয়াতেও হচ্ছে। কিন্তু আর হল না। কোন ফাঁকে আস্তে আস্তে গজিয়ে উঠছিল প্যান্টালুন, ওয়েস্টসাইড। মেজোবিত্ত বাঙ্গালী সেখানে ঢুকতে তখনো ভয় পায়, কিন্তু একটু পয়সা থাকলেই সাহস করে ঢুকে পড়াও যায়। কিনবো কি না, সে পরের কথা, ওখানে ঢুকে দেখলে তো কেউ খেদিয়ে দায় না? আর সেই ভয় পুরো কেটে গেল, যখন বিয়ানি সায়েব বিয়োলেন বিগ বাজার। সারা বছরটাই চৈত্রমাস তার পর থেকে। বাঙ্গালী এখন তাই সারাবছরই চৈত্র সেলের “মজা নেয়”।

তা বলে কি পয়লা বৈশাখে নতুন জামা হবে না? নিশ্চয়ই হয়। জামা হয়, প্যান্ট হয়, জুতো হয়, শাড়ি হয়, সালোয়ার স্যুট ও হয়। বাদশার সেল এ কেনা হয় কি না জানি না, কিন্তু অন্তর্বাস ও যে কেনা হয়, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এই ভাবেই বাঙ্গালী এখনো প্রস্তুত হয় নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে। আর এই বাঙ্গালীর মধ্যে ব্যাঙ্গালুরু তীর্থ সেরে ফেরা আই টি সন্তানের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাংলা নববর্ষের আগের দিন তাই ইমেইল আসে – “ইট ইস টাইম তো সেলিব্রেট এগেইন, সো টুমরো উই এক্সপেক্ট দ্য টিম টু কাম টু অফিস ড্রেসড ইন এথনিক ওয়্যার”।

বাঙ্গালীর এথনিক ওয়্যার ব্যাপারটা একটু ঝাড়ের জিনিস। ওপরের দিক টা পাঞ্জাবি, সেটা ঠিক আছে। জিন্স এর সঙ্গে যায় ও ভালো। মাথা গলিয়ে পরে নাও, ব্যাজের লকেট তার ওপরে ঝুলিয়ে নিলেই হল। কিন্তু নিচের দিকের রিয়েল এথনিক ওয়্যার আসলে ধুতি। এবং ওখানেই কেলো টা। ধুতির মধ্যে লুঙ্গির মতোই একটা ফ্রি এয়ার ফ্লো বন্দোবস্ত আছে, কিন্তু ধুতি মালকোঁচা মেরে পরা যায়না। প্লাস জুতোর ওপরে পরা যায়না, স্নিকার্স এর সঙ্গেও না। অতএব চটি কেনো, ইলাস্টিক দিয়ে ধুতি কোমরে আটকাও, তারপর সেক্সি লেগ যেন খুব বেশি এক্সপোসড না হয়, সেই নিয়ে ব্যাস্ত থাকো সদাই। অনেকে তাই হাফ এথনিক হয়ে পাজামা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। মেয়েদের শাড়ি নিয়ে আলাদা কিছু চাপ আছে বলে মনে হয় না, বরং যার একটু এক্সপোজার প্রয়োজন, সে আঁচল টা দরকার মতো টাইট বা লুস করে নিতে পারে। সকালে একটু ফুল টুল দিয়ে লবি টা সাজাও নিজেরাই। এদিন দুপুরে একসাথে লাঞ্চ। তবে কোম্পানী ভুরীভোজের বন্দোবস্ত করে না আজকাল আর, তাই বাঙ্গালী দুপুরে ওলন্দাজ হয়ে যায়। চাঁদা তুলে খাবার আসে, সাধারনতঃ বিরিয়ানি। কিছু ক্ষেত্রে চাইনিস বা পাস্তাও আসে - ওগুলোই এখন বাঙ্গালি খাবার, খেতে খেতে একবার বললেই হল – আই জাস্ট লাভ দ্য সুক্তো অ্যান্ড চিতোলস পেটি ফ্রম ভাজাহারি ম্যান্না। দুপুরে একটু কাজ, তারপরে এথনিক ড্রেস পরা আই টি বাঙ্গালী এই একদিন অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে – বাচ্চাদের নিয়ে ব্যেওমকেশ বাক্সি দেখতে হবে না? তারপর একা একা কিম্বা দঙ্গলবেঁধে একটু দারুপান, শেষে আবার প্যাকেটের খাবার খেয়ে নববর্ষের রাতে শুতে যায় বাঙ্গালী।

অটো টা এগিয়ে গেলো। এখনো শুনতে পাচ্ছি – “আর মাত্র পাঁজ দিন আম্নি এই সুযোগ পাচ্চেন”। সচীনদার মেয়ে বাবার দোকানে ক্যাশ সামলাচ্ছে, বউ উনুনে কয়লা দিচ্ছে, সচীনদা ওপাশে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি চায়ের ভাঁড়টা ফেলে আবার ভাবলাম, আর মাত্র পাঁচ দিন, তারপরেই অনুপমের বসন্ত চলে যাবে।